লোকসভা ভোট মিটতে না মিটতেই রাজ্যের চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন এর দিন ঘোষণা করলো নির্বাচন কমিশন। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে এই চারটি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রেই এগিয়ে বিজেপি। তৃণমূলের নিজেদের দখলে থাকা মানিকতলা বিধানসভাতেও এগিয়ে থাকার মার্জিন খুব একটা বেশি নয়। ফলে চার কেন্দ্রে কারা টিকিট পাচ্ছেন তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে জল্পনা।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- গত ৬ জুন লোকসভা নির্বাচনের ভোট পর্বের সমাপ্তির কথা জানিয়েছিলো নির্বাচন কমিশন। তারপর সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই ফের একবার ভোটের ঘোষণা করা হলো। এবার অবশ্য রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে আগামি ১০ জুলাই। ফল প্রকাশ ১৩ জুলাই। যে চার কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো হলো রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদা ও মানিকতলা। এই চার কেন্দ্রের মধ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম তিনটি কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলো বিজেপি। যদিও এই তিন কেন্দ্রেরই জয়ী বিজেপি বিধায়ক পরে তৃণমূলে যোগ দেন। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে সেই তিনজনই জোড়া ফুলের প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়ান এবং রাজ্যের শাসকদলের প্রবল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাঁরা রায়গঞ্জ, বনগাঁ ও রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে পরাজিত হন সেই বিজেপির কাছেই। তাৎপর্যপূর্ণ হলো এই তিন প্রার্থী তাঁদের নিজেদের বিধানসভা কেন্দ্রেও পদ্ম ফুলের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভা ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে রায়গঞ্জ লোকসভার অন্তর্গত ৩৫.রায়গঞ্জ বিধানসভায় কৃষ্ণ কল্যানী পিছিয়ে রয়েছেন ৪৬,৭৩৯ ভোটে। আবার রানাঘাট লোকসভার অন্তর্গত ৯০.রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভায় মুকুট মনি অধিকারী পিছিয়ে রয়েছেন ৩৬,৯৩৬ ভোটে। আর বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত ৯৪.বাগদা বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস পিছিয়ে রয়েছেন ২০,৬১৪ ভোটের ব্যবধানে। প্রসঙ্গত ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে এই তিনজন পদ্মের প্রতীকে এই তিন বিধানসভা থেকে জিতেছিলেন। কিন্তু দল বদল করে তৃণমূলে এসে লোকসভায় প্রার্থী হয়ে জিততে তো পারেন ই নি, এমনকি ২০২১ এর জেতা আসন ও ধরে রাখতে পারেন নি। ফলে আগামী উপনির্বাচনে এই তিনজনের উপরেই দল আবার আস্থা রাখবে নাকি নতুন মুখকে সামনে আনবে তাই নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। তবে প্রার্থীর নাম ঠিক করার আগে জেলা থেকে পাওয়া রিপোর্টের দিকেও লক্ষ রাখা হবে বলেই সূত্রের খবর। সূত্রের আরও খবর, এই তিন জেলা থেকে যে রিপোর্ট ইতিমধ্যে দলের শীর্ষে এসে পৌঁছেছে তাতে এই তিনজন খুব একটা সহজ জায়গায় নেই তা বলা যায়। যদিও এই বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সেক্ষেত্রে দলের দুই শীর্ষ নেতৃত্ব এই তিনজনকে একটা শেষ সুযোগ দেন কি না সেটাই দেখার। আর ১৬৭.মানিকতলা বিধানসভা থেকে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এর লিড মাত্র ৩,৫৭৫ ভোট। ২০২১ সালে প্রায় ২০ হাজারের বেশি ব্যবধানে জেতা এই বিধানসভায় এতটা ভোট কমে যাওয়া অবশ্যই চিন্তায় রাখবে রাজ্যের শাসক দলকে। এই মানিকতলা কেন্দ্রে টিকিট পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন এই কেন্দ্রেরই প্রাক্তণ বিধায়ক, রাজ্যের প্রাক্তণ মন্ত্রী সাধন পান্ডের (যাঁর মৃত্যুতেই এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে) কন্যা শ্রেয়া পান্ডে। আবার এক প্রাক্তণ আমলাকে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হবে বলেও জল্পনা রয়েছে শাসক দলের অভ্যন্তরে। এমতাবস্থায় সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পরেও আবার নতুন করে প্রার্থী বাছাই করা নিয়ে কিছুটা ভাবনাচিন্তার মধ্যেই পড়তে হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস কে। যদিও শাসকদলের অনেকেরই মত এই উপনির্বাচনে শুধু মানিকতলা নয়, বিজেপির দখলে থাকা বাকি তিনটি আসনও তারা হেলায় জিতবেন। উত্তর ১৩ জুলাই।
আরও পড়ুন : এবার মন্ত্রীত্বের দাবিদার সৌমিত্র, মন্ত্রীত্ব না পেলে কি করবেন?