রবিবার রথযাত্রা আর এই রথযাত্রা উপলক্ষে জগন্নাথের আরাধনায় মেতে ওঠেন আপামর বাঙালি। রথের রশিতে টান দিয়ে শুরু হয় রথযাত্রার উদযাপন। বাংলার রথযাত্রার ইতিহাস প্রাচীন। বহু যুগ আগে থেকেই জগন্নাথকে কেন্দ্র করে এমন সাংস্কৃতিক উদ্যাপন হয়ে আসছে বাংলায়। এই দিনের জগন্নাথের ভোগের আয়োজনও বিপুল ভাবে হয়। তবে জানেন কি এই ভোগ জগন্নাথেরও আগে নিবেদন করা হয় অন্য কাউকে। সেটা না হলে জগন্নাথ ভোগ গ্রহণ করেন না।
সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, সাংবাদিক: রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুরী তো বটেই এর পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় উৎসব আয়োজন করা হয়৷ তবে যার জন্য এত আয়োজন তার আগে ভোগ দেওয়া হয় অন্য কাউকে। তিনি হলেন দেবী বিমলা।
কথিত আছে, শ্রীকৃষ্ণের হৃদয় স্পন্দিত হয় জগন্নাথের মূর্তির মধ্যে। আর পুরীতে দেবী বিমলাকে ভগবান জগন্নাথের মতো পুজো করা হয়। জগন্নাথদেব এবং দেবী বিমলার মধ্যে গভীর সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। তাই একথা বিশ্বাস করা হয় যে, দেবীকে নিবেদন না করলে ভগবান জগন্নাথদেব প্রসাদের স্বাদ নেন না। আর এই কারণেই ভোগ নিবেদন আগে করা হয় দেবী বিমলাকে
পুরীর মন্দিরেই অধিষ্ঠান করেন দেবী বিমলা। মন্দির চত্বরেই রয়েছে বিমলা শক্তিপীঠ। দেবী বিমলাকে মাতা সতীর আদি শক্তি রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। জগন্নাথকে দেওয়া ভোগ দেবী বিমলাকে নিবেদনের পরেই জগন্নাথ গ্রহণ করেন।
এছাড়া পৌরাণিক মতে, দেবী বিমলা হলেন জগন্নাথ পুরীর অধিপতি দেবী। লক্ষ্মী নিজেই ভগবান জগন্নাথ অর্থাৎ বিষ্ণুর ভোগ প্রস্তুত করতেন। নারদ মুনি এই ভোগ পাবার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন, অবশেষে একবার লক্ষ্মীর বর পেয়ে তিনি মহাভোগের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ পেলেন, কিন্তু দেবী এই বিষয়টি নিজের কাছে গোপন রাখতে বলেছিলেন।
নারদ প্রসাদ নিয়ে চলে গেলেন কৈলাসে সেখানে তখন মহাদেব, যমরাজ, ইন্দ্র সহ সমস্ত দেবতা বৈঠকের জন্য উপস্থিত ছিলেন। ভুলবশত জগন্নাথের মহাভোগ আস্বাদনের কথা তিনি বলে ফেলেন যা শুনে মহাদেবও সেই প্রসাদ ভোগ করলেন। খাবার গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি খুশি হয়ে তান্ডব করতে লাগলেন। এতে কৈলাস দুলতে লাগল, দেবী পার্বতী শিবের খুশির কারণ জিজ্ঞেস করলেন এবং তারপর তিনিও মহাপ্রসাদের কথা জানতে পারলেন।
দেবী পার্বতীও শিবের কাছ থেকে প্রসাদ খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু প্রসাদ তখন শেষ। এতে পার্বতী রেগে গিয়ে বললেন, আপনি একাই প্রসাদ খেয়েছেন। এখন এই প্রসাদ এর স্বাদ সারা বিশ্ব পাবে। দেবী পার্বতী রাগান্বিত হয়ে শিবের সঙ্গে জগন্নাথ ধামে তার ভাইয়ের বাড়িতে পৌঁছে বললেন, ভাই, আমি এত দিন পর আমার মাতৃগৃহে এসেছি, আপনি কি আমাকে খাওয়াবেন না? ভগবান জগন্নাথ পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন। দেবী পার্বতী তাকে জিজ্ঞেস করলেন যে কেন তিনিমহাভোগকে নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন?
জগন্নাথ রূপী বিষ্ণু বলেছিলেন যে লক্ষ্মীর খাবারের স্বাদ গ্রহন করলে সকলেই কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাবে, এতে পাপ-পুণ্যের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে, তাই তিনি এই মহাপ্রসাদকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছিলেন, কিন্তু এখন থেকে সারা বিশ্ব এর স্বাদ পাবে এবং এখন থেকে যা কিছু মহাভোগ প্রস্তুত করা হবে, তা প্রথমে দেবী বিমলাকে নিবেদন করতে হবে এবং তবেই শ্রী জগন্নাথ রূপী বিষ্ণু তা গ্রহণ করবেন । সেই সঙ্গে পার্বতীকে দেবী বিমলা রূপে শ্রী জগন্নাথ ধামে অধিবাস করার কথা বলেন।
আরও পড়ুন : রাজনীতি থেকে দূরে সরে যেতে চাইছেন দিলীপ?