প্রবীর মুখার্জি, সাংবাদিকঃ দেশের সবচেয়ে বড় রথযাত্রার উৎসব (Rath Yatra 2024) যদি হয় । তবে রথযাত্রায় রাজ্যের সবচেয়ে বড় উৎসবটি হয় হুগলির শ্রীরামপুরের মাহেশে। স্বয়ং শ্রীচৈতন্য এই নামটি দিয়েছিলেন “নব কলেবর”। সন্ন্যাস গ্রহণের পর পুরীতে যাবার পথে মাহেশে পৌঁছেছিলেন শ্রীচৈতন্য। সেখানে মন্দিরের বিগ্রহ দর্শনের পরই জ্ঞান হারান তিনি। তখনই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী তাঁকে মন্দিরের দায়িত্বভার অর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। মহাপ্রভু তখল কমলাকার পিপলাইকে এই মন্দিরের ভার দেন।
মাহেশের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার এক ইতিহাস আছে। ধ্রবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক বাঙালি সাধু পুরীতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে জগন্নাথদেবকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু, মন্দিরের সেবাইতরা তা করতে দিতে চাননি। ভারাক্রান্ত মনে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে গভীর ধ্যানে মগ্ন হন ধ্রুবানন্দ। ভগবান তাঁকে স্বপ্নাদেশে দেন। বাংলায় গিয়ে ভাগীরথীর পাশে মাহেশ নামে একটি গ্রামে মন্দির প্রতিষ্ঠার আদেশ দিয়ে বলেন, সেখানে বিগ্রহ তৈরি করে ভোগ নিবেদন করতে। কারণ, জগন্নাথদেব স্বয়ং তাঁর হাতে ভোগ গ্রহণের জন্য উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন। মূর্তি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় দারুবৃক্ষ বা নিম গাছ পাঠিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতিও দেন জগন্নাথদেব স্বয়ং। সেই স্বপ্নাদেশ পেয়েই বাংলায় ফিরে আসেন ধ্রুবানন্দ। কোনও এক বর্ষার দিনে মাহেশের ঘাটে ভেসে আসা নিমকাঠ দিয়ে দেবতার মুর্তি গড়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ধ্রুবানন্দ।
ওদিকে মন্দিরে বিগ্রহসেবার দায়িত্বভার পেয়ে কমলাকার পিপলাই আসেন নবদ্বীপে। সেখানে শাস্ত্রপাঠ নিতে থাকেন সুন্দরবনের খালিঝুলির জমিদার বাড়ির সন্তান কমলাকার। মূলত তাঁরই ভাবনায় রথযাত্রার সূচনা হয়। ১৭৫৫ সালে কলকাতার নয়নচাঁদ মল্লিক মাহেশে জগন্নাথ দেবের যে মন্দির নির্মাণ করেছিলেন, সেই মন্দিরেই আজও হয়ে আসছে পুজো-পাঠ। ১৭৯৭ সালে কৃষ্ণরাম বসু একটি রথ দান করেছিলেন। সেই সময়েই যার দাম পড়েছিল ২০ হাজার টাকা। এরপর তাঁর ছেলে ১৭৯৮ সালে আরও একটি রথ দান করেছিলেন। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশতঃ ১৮৮৪ সালে আগুনে ভষ্মীভূত হয়ে যায় সেই রথ। পরের বছরই শ্যামবাজারের বসু পরিবারেরই এক কর্তা বর্তমান এই রথটি দান করেন এই রথটি সম্পুর্ণ লোহার তৈরি। ৫০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই রথে রয়েছে ১২টি লোহার চাকা। ৯টি চূড়া রয়েছে বর্তমানের এই রথটিতে।
ঠাকুর শ্রীরামকৃ্ষ্ণ পরমহংসদেব, সারদা মা, নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ বিভিন্ন সময়েই এই রথযাত্রায় এসেছিলেন। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাস রাধারাণী হারিয়ে গিয়েছিলেন এই মাহেশের রথের মেলাতেই।
আরও পড়ুন : জগন্নাথেরও আগে ভোগ নিবেদন করা হয় তাকে, কে সেই দেবী?