ইউএসএ-এর দেড় কোটি টাকার প্য়াকেজের চাকরি ছাড়লেন আয়ুষ। কারণ বাবা মা থেকে বেশি দূরে থাকতে পারবে না আয়ুষ
সহেলী দত্ত, প্রতিনিধি : বাবা-মাকে ছেড়ে দূর দেশে পাড়ি দিতে নারাজ আয়ুষ। ছেড়ে দিলেন বছরে দেড় কোটি টাকার প্য়াকেজের চাকরি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বাগুইআটির আয়ুষ শর্মা। বড়ো হওয়া কলকাতাতেই। তবে বিশ্ববিদ্যায়লয়ের ক্যাম্পাসিং-এ চাকরির ডাক এসেছিল ইউএস থেকে। তবে চাকরি আর পরিবারের মধ্যে পরিবারকেই প্রাধান্য দিল আয়ুষ। অফার ছিল ইউএসএ-তে গিয়ে জীবনের প্রথম চাকরি শুরু করার। বেতন প্যাকেজও ছিল আকর্ষণীয়। কিন্তু সেই অফার পেয়েও তা ফিরিয়ে দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটির ছাত্র আয়ুষ শর্মা। চলতি বছর প্লেসমেন্ট সিজনে আয়ুষই সর্বোচ্চ বেতনের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আয়ুষ বাগুইহাটিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। ইউএসএ-র একটি স্টার্টআপ কোম্পানি থেকে চাকরি অফার এসেছিল। কিন্তু আয়ুষ জানান, ‘প্রথমে যখন অফারটা নিয়েছিলাম মনে হয়েছিল, যেহেতু বহু আইটি কোম্পানি ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সুযোগ দিচ্ছে সেটা এমনই হবে। বেতন প্যাকেজও আকর্ষণীয় ছিল। কিন্তু পরে ওরা বলে, ইউএসএ-তে গিয়েই জয়েন করতে হবে। এখনই দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় হয়নি, প্রথম কারণ হল আমার বাবা-মা। তাঁরা আমাকে এতদিন প্রাণপাত করে বড় করেছেন। টাকার পিছনে ছুটতে গিয়ে ওঁদের একলা করে দিতে চাই না। দেশ ছাড়ার সুযোগ আমার কেরিয়ারে আরও আসবে কিন্তু এখনই দেশও ছেড়ে যেতে চাই না। এখানে কিছু করতে চাই। পরিবার পরিজন, বিশেষ করে বাবা-মাকে ছেড়েও খুব দূরে চলে যেতে চাই না। আর সেই কারণে এমন সিদ্ধান্ত’।
সাম্প্রতিক সময়ে যাদবপুরে কোটি টাকার চাকরির অফার আগেও অনেকে পেয়েছেন। কিন্তু আয়ুষের মতো এ ভাবে কেউই চাকরি ছেড়ে দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লেসমেন্ট সেলের দাবি, চলতি বছর প্রায় ৯০ শতাংশ পড়ুয়ার হাতে দেশের সেরা কোম্পানিগুলির চাকরি তুলে দিতে পেরেছেন তাঁরা। র্যাগিং-ছাত্র মৃত্যুর জেরে গত এক বছর ধরে নানা ঝড়-ঝাপটার মোকাবিলা করছে যাদবপুর। কিন্তু প্লেসমেন্টের নিরিখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, চলতি বছর মোট ৯১৮ জন পড়ুয়া প্লেসমেন্ট নেবেন বলে ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা থেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তারমধ্যে ৮৩০ জনের চাকরি হয়েছে। সবার মধ্যে ব্যতিক্রম আয়ুষ। তাঁর পড়াশোনা ক্যালকাটা পাবলিক স্কুলে। তারপরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। মা গৃহবধূ এবং বাবা বিমা সংস্থায় কাজ করেন।
আয়ুষের কাছে ইউএসএর ওই কোম্পানির অফার ছাড়াও ডয়েশ ব্যাঙ্ক এবং ওয়ার্নার ব্রাদার্স থেকে জোড়া চাকরির অফার এসেছিল । আয়ুষ ওয়ার্নার ব্রাদার্সের চাকরিটা নিয়েছেন। বার্ষিক বেতন ২৪ লক্ষের আশেপাশে। এই কাজের জন্য তাঁকে যেতে হবে বেঙ্গালুরু। তবে এবার তো তাকে পরিবারের থেকে আলাদা থাকতেই হবে, সেই ক্ষেত্রে আয়ুষ বলেন, বিপদে-আপদে, মন খারাপে বেঙ্গালুরু থেকে ফ্লাইটে দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে আমি চাইলে কলকাতা ফিরতে পারব। কিন্তু ইউএসএ থেকে ফেরা এত সহজ নয়। বেঙ্গালুরু দেশের মধ্যেই। দেশের মানুষের করের টাকায় পড়াশোনা করে দেশকে কিছু কন্ট্রিবিউট করতে চাই।
চলতি বছর পিডব্লিউসি, মর্গ্যান স্ট্যানলি, ডয়েশ ব্যাঙ্ক, কোকাকোলা, জিন্দাল গ্রুপ, ওরাক্ল-এর মতো একাধিক বহুজাতিক কোম্পানি যাদবপুরে চাকরি দিতে এসেছিল। দেশের মধ্যে যে পড়ুয়াদের চাকরি হয়েছে তার মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৭ লক্ষ টাকা বার্ষিক বেতনের প্যাকেজ। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইটির দুই পড়ুয়া এই চাকরি পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানান, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অন্তত আটটি বিভাগে ৯৫ শতাংশের বেশি পড়ুয়া চাকরি পেয়েছেন। এর মধ্যে কম্পিউটার সায়েন্স, কনস্ট্রাকশন, ইনস্ট্রুমেন্টেশনের মতো একাধিক বিভাগ রয়েছে যেখানে ১০০ শতাংশ পড়ুয়ার হাতেই চাকরি তুলে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন : কার্গিলের ২৫ বছর পার