পৌষালী উকিল, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ভারতের মুরগির গলাকে ঘিরে রেখেছে ভারতের ৭ বোন। তবুও কেন টুঁটি চিপে ধরার আশঙ্কা ? কেই বা চেপে ধরতে চাইছে টুঁটি ? চিকেনের গলায় কোপ দিতে পারে কে? সেই সব উত্তরই রয়েছে এই প্রতিবেদনে।
চিকেন নেক
চিকেন নেক বা মুরগির গলা। কী সেটি? বাস্তবে এটি চিকেন না হলেও দেখতে অবিকল চিকেনের মতোই। যা খাওয়ার লোভ সামলাতে পারছে না ভারতের শত্রু দেশগুলি। কিন্তু কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই চিকেন নেক ?
চিকেন নেকের গুরুত্ব
শিলিগুড়ি করিডোর। এই জায়গাটিকেই মূলত চিকেন নেক বলা হয়। একে দোধারী তলোয়ার, অ্যাকিলিস হিল, বা গোড়ালি হিসেবেও ডাকা হয়। ভৌগলিক অবস্থানের গুরুত্ব এবং ভারতের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় শিলিগুড়ি করিডোরকে এতগুলি নামে অভিহিত করা হয়। বর্তমানে যা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। বিশেষ করে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মহম্মদ ইউনুস আসার পর থেকেই এই আলোচনা অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি জিইয়ে রাখতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে ভারত কি আগ্রাসন চালাবে বহু আলোচিত এই চিকেন নেক নিয়ে, নাকি ভারতের এই চিকেন নেকের টুঁটি চেপে ধরবে কেউ?
চিকেন নেকের ভৌগোলিক অবস্থান।
বাংলাদেশে ও নেরালের মধ্যবর্তী একটি অঞ্চল হল শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেন নেক। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার। প্রস্থ প্রায় ২২ কিলোমিটার। মূল ভারতীয় ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর পূর্ব ভারত এই করিডোরের মাধ্যমে যুক্ত। যদি এই করিডোর না থাকতো তাহলে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর পূর্ব ভারতের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতো। কারণ উত্তর পূর্ব ভারত পুরোপুরি স্থলভাগবেষ্টিত। এর আশেপাশে নেই কোনও সমুদ্র। তবে এই চিকেন নেকের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত রয়েছে ভারতের সেভেন সিস্টার।
সেভেন সিস্টারস কারা ?
মোট ২৮টি প্রদেশের মধ্যে উত্তর পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত ৭ টি প্রদেশকে একত্রে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়। এগুলি হল, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল এবং নাগাল্যান্ড। অবস্থানগত দিক দিয়ে সেভেন সিস্টার্স ভারতের মূল ভূখণ্ড বা রাজধানী থেকে অনেক দূরে। ফলে চিকেন নেক দিয়েই এই ৭ বোনের ওপর নজর রাখে ভারত। কারণ ভৌগোলিকভাবে এই সেভেন সিস্টারস এমন অবস্থানে রয়েছে যে ভারত চাইলেই নৌপথে কিংবা অন্য কোনও উপায়ে যোগাযোগ করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে একমাত্র পথ হল এই শিলিগুড়ি করিডোর। এই সেভেন সিস্টারসের ভূমিকা বারবারই দেখা গিয়েছে বেশ প্রতিবাদী এরা। ভারত থেকে আলাদা হয়ে পৃথক রাষ্ট্র গড়ার দাবি এদের। তাই বছরের বেশিরভাগ সময়ই এইসব জায়গা উতপ্ত হয়ে থাকে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন ও সংগ্রামে। যদিও ভারত সর্বদাই চিকেন নেক বা শিলিগুড়ি করিডোরের ঘাড়ে বসে নজরদারি চালাতে থাকে এই ৭ বোনের ওপর।
হুঁশিয়ারির মুখে সেভেন সিস্টারস
সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসও তাঁর বক্তব্যে এই সেভেন সিস্টারসের কথা বলেন। তিনি হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে ভারত, মায়ানমার ও সেভেন সিস্টারস কারও জন্যই ব্যাপারটা সুখকর হবে না।
আপনি জানলে অবাক হবেন, ২০১৭ সালে চিন ভারতের এই চিকেন নেক বা শিলিগুড়ি করিডোরক দখলে আনতে চেয়েছিল। যদি সেই পরিকল্পনায় চিন সফল হতো, তাহলে ভারতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা যেত। যার ফলে সেভেন সিস্টারসের কোনও কোনও রাজ্য ভারতের হাতছাড়া পর্যন্ত হতে পারত। ফলস্বরূপ ভারতকে বাঁচিয়ে রাখা এই ৭ বোনের জোর কমে যেত আরও। নিরপত্তাহীনতায় ভুগতে হত ভারতকে। তবে সেই চাপ দেওয়ার চেষ্টা যে আবারও করবে না চিন, এমনটা ভাবা ভুল।
চিকেন নেকের বিকল্প ?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এইভাবে আশঙ্কায়-আতঙ্কে আর কতদিন? চিকেন নেকের বিকল্প পথ কি হয় না? অবশ্যই সেই সমস্যার সমাধানেও সচেষ্ট হচ্ছে ভারত সরকার। যেমন- আগরতলা-আখাউড়া রেলপথ, তেঁতুলিয়া করিডোর, ফেনি নদীতে মৈত্রী সেতু এবং কালাদান মাল্টি-মডেল প্রজেক্ট। এই সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেই মিলবে বিকল্প পথ। কিন্তু যতদিন না হয়, ততদিন মুরগির ঘাড়ে ঝুলে থাকবে বিপদ।