অনুসূয়া দাস, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বেলগাছিয়ায় ১২ বিঘা জমির উপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল এক হাসপাতাল। ১৮৮৬ সালে যে হাসপাতালের নাম ছিল অ্যালবার্ট ভিক্টর হাসপাতাল। যে নামের হাসপাতাল এখন বেলগাছিয়াময় খুঁজলেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। গুগল ম্যাপও সেই নামের হাসপাতাল খুঁজে দিতে কার্যত অক্ষম। তবে সেই হাসপাতাল যে একেবারে বিলীন হয়ে গেছে, বা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, তাও নয়। তাহলে…..?
এই হাসপাতাল আজও সবার স্বচক্ষে মাথা তুলেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। বহু মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা নিতে দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন এই হাসপাতালে। হাসপাতালের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু সুনাম। তবে সম্প্রতি সেইসব সুনাম ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। সেই জায়গায় আষ্ঠেপৃষ্ঠে লেগেছে দুর্নামের প্রলেপ। ১৮৮৬ সালের অ্যালবার্ট ভিক্টর হাসপাতালই আজকের আরজি কর। গত কয়েকদিনের বেশ কয়েকটি ঘটনায় তা আজ ক্ষত বিক্ষত। কার্যত বলা যেতে পারে একাধিক ওয়ার্ড চূর্ণ-বিচুর্ণ।
আরজি করের ইতিহাসে একবার চোখ বোলানো যাক…
এশিয়ার সর্বপ্রথম বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এটি। যার সঙ্গে অতঃপ্রতভাবে জড়িত রয়েছে তিনি হলেন ডা. রাধাগোবিন্দ কর। তাঁর অবদান ভোলার নয়।
১৮৮৩ সালে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমআরসিপি ডিগ্রি নিয়ে কলকাতায় ফেরেন। এখানে এসে তিনি উপলদ্ধি করতে পারেন, বাংলায় ডাক্তারি পড়ুয়াদের সমস্যা। এই সমস্যা দূর করতে নিজেই লিখে ফেলেন বেশ কয়েকটি বই। ডাক্তারি বিভাগের তাঁর লেখা প্রথম বই ভিষগবন্ধু। ১৮৭১ সালে যে বই প্রকাশিত হয়।
রাধাগোবিন্দের লেখা বই-
সংক্ষিপ্ত শারীরতত্ত্ব
স্ত্রীরোগের চিত্রাবলী ও সংক্ষিপ্ত তত্ত্ব
রোগী পরিচর্যা
কবিরাজ ডাক্তার সংবাদ
বাংলা ভাষাতেই লেখা হয়েছিল প্রত্যেকটি বই। শুধু বই লিখেই তিনি ক্ষান্ত হননি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তৈরি করবেন এক হাসপাতাল। যার জন্য ভিক্ষে পর্যন্তও করেছিলেন তিনি।
. ১৯০৪- রাধাগোবিন্দের এই উদ্যোগের সঙ্গে মিলিত হয় কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস অফ বেঙ্গল।
. তারপর কলেজটির নামকরণ হয় বেলগাছিয়া মেডিক্যাল কলেজ।
. ১৯১৬ সালের ৫ জুলাই কলেজের দ্বিতীয় তলায় আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়।
. ১৯১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি দেন চিকিৎসক রাধাগোবিন্দ কর।
তাঁর মৃত্যুর ঠিক একবছর পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমোদন পেয়ে যায় এই কলেজ।
. ১৯৩৫ সালে মেডিক্যাল কলেজের মধ্যেই তৈরি করা হয় কেদারনাথ দাস মেটারনিটি হাসপাতাল
. ১৯৩৯ সালে তৈরি হয় পৃথক কার্ডিওলজি বিভাগ।
. বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায় রাধাগোবিন্দ করের নামে হাসপাতালের নামকরণ করেন আরজি কর।
বর্তমানে প্রায় ১৫ একর জমির উপর অবস্থিত এই হাসপাতালে রয়েছে ১০টি বিল্ডিং ও ৭টি হস্টেল। রয়েছে ১২১০টি বেড। রাধাগোবিন্দ করের স্বপ্নের আরজি কর আজ বারেবারে উঠে আসছে শিরোনামে।