সহেলী দত্ত, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ৯ অগাস্ট। আরজি করে ৩১ বছরের মহিলা ডাক্তারকে খুন ও ধর্ষণ। সোদপুরের ডাক্তারি পড়ুয়াই কি প্রথম, নাকি এমন নৃশংস ও রহস্যজনক ঘটনা আগেও ঘটেছে? যেগুলোর আড়ালে থাকা কালো কাহিনী আরজি করের সাদা চাদরের বাইরে কখনও আসতেই দেওয়া হয়নি? কিছু কাহিনী লোকমুখে শোনা, কিংবা ইন্টারনেটে ভাইরাল। কখনওবা লেখকদের কলমেও উঠে এসেছে। তবে এবারের ঘটনায় কী এমন হল যে তা দাবানলের রূপ নিল? আরজি করেই শুকিয়ে রক্তের দাগগুলোর কেস ডায়েরির পাতা উল্টে দেখতে বাধ্য় করল ?
যত কাণ্ড আরজি করে
২০০১ সাল। তবে থেকে ৬ টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কী ছিল আরজি করের সাত কাহন ?
সাদা চাদরের তলায় কালো কাহিনী !
১. ২০০১-সৌমিত্র বিশ্বাস
২০০১ সালের ২৫ অগস্ট। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল সৌমিত্র বিশ্বাস নামে এক চতুর্থ বর্ষের ছাত্রকে। সে বারও কর্তৃপক্ষ দ্রুত বলে দিয়েছিল এটা আত্মহত্যা। অভিযোগ উঠেছিল, কলেজ হস্টেলেই পর্নোগ্রাফি চক্র চলত। এমনকি মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ার মতো ঘৃণ্য বিষয়ও অবাধে চলত। সৌমিত্র এই সব অপকর্ম ফাঁস করে দিতে চেয়েছিলেন। তাই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
২. ২০০৩- অরিজিৎ দত্ত
২০০৩-এর ৫ ফেব্রুয়ারি ‘আত্মঘাতী’ হয়েছিলেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের হাউসস্টাফ অরিজিৎ দত্ত। পুলিশ জানিয়েছিল, অরিজিৎ তাঁর হাতে অ্যানাস্থেশিয়ার ইনজেকশন দিয়েছিলেন। তারপর তাঁর হাতের শিরা একটি ব্লেড দিয়ে চিড়ে দিয়েছিলেন। এরপর, একটি সার্জিক্যাল কাচি দিয়ে হাতের শিরাগুলি কেটেছিলেন। সবশেষে মেইন হোস্টেলের ছাদ থেকে নীচে ঝাঁপ মেরেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ আজও রহস্যে।
৩. ২০০৩- প্রবীণ গুপ্তা
অরিজিতের মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন পরই প্রায় একই রকমভাবে আত্মহত্যার চেষ্টার খবর মিলেছিল। সে বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র প্রবীণ গুপ্তা। মানিকতলার লাল মোহন হোস্টেলে থাকতেন এই হরিয়ানার বাসিন্দা। গভীর রাতে তিনি তাঁর দুই হাতের কব্জির শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তবে, সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। আজ পর্যন্ত এ নিয়ে নীরবই তিনি।
৪. ২০১৬- ডা. গৌতম পাল
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক ছিলেন ডা. গৌতম পাল। ২০১৬-র ২৪ অক্টোবর, তাঁর দক্ষিণ দমদমের ভাড়াবাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ৫২ বছর বয়সী এই ডাক্তারের পচা গলা দেহ। দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে, প্রথম তলার একটি ঘরের বিছানায় তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছিল পুলিশ। কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি।
৫. ২০২০- পৌলমী সাহা
সেই সময় কোভিড-১৯ মহামারি চলছিল। পয়লা মে, ২০২০-তে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল দ্বিতীয় বর্ষের স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থী ২৫ বছরের মহিলা চিকিৎসক পৌলমী সাহার। পুলিশ জানিয়েছিল, আরজিকর হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের ছ’তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন পৌলমী। এই ক্ষেত্রেও কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি।
৬. ২০২৩- শুভ্রজ্যোতি দাস
১৩ অগাস্ট, ২০২৩-এ ড্রাগ ওভারডোজের জেরে মৃত্যু হয় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন শুভ্রজ্যোতি দাসের। আরজি কর থেকেই এমবিবিএস করার পর, ওখান থেকেই ইন্টার্নশিপ করছিলেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছিল শুভ্রজ্যোতি নিজেই কি অতগুলি অ্যান্টিডিপ্রেসনড খেয়েছিলেন? নাকি কেউ তাঁকে খাইয়ে দিয়েছিল? সেই উত্তর আজও অজানা।
৭. ২০২৪
৯ অগাস্ট সোদপুরের ডাক্তারি পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু সেই আরজি করেই।
আরজি করকাণ্ডের জেরে হাসপাতালকে কাঠগড়ায় তুলতে যে যে প্রশ্ন উঠে আসছে তা হল—
যত কাণ্ড পিজিডিতেই কেন ?
পিজিডিতে খাতা কারা দেখেন ?
জাল ওষুধ ঢুকছে হাসপাতালে ?
দিনের পর দিন নির্দ্বিধায় তা ব্যবহার হচ্ছে ?
ওষুধ ব্যবহারের আড়ালে কি মাদক কারবার ?
মেডিক্যাল বর্জ্য থেকে নানা জিনিস বিক্রির কালোবাজারি ?
হস্টেল ও ক্লাসরুমে যৌনচক্র, সেক্স ব়্যাকেট ?
হাসপাতালেই দেহ ব্যবসা থেকে পতিতাবৃত্তি ?
কোথায় শুরু ব়্যাকেটের সুতোর মাথা ?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কি জেনে ফেলেছিলেন নিহত তরুণী ?
সবটা জেনে যাওয়াতেই কি ডাক্তারি পড়ুয়াকে শেষ করে দেওয়া হল?
প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে…………………………