তারা কথা রেখেছিলেন। যৌবনের তারুণ্য পেরিয়ে হাত ধরে একসঙ্গে বৃদ্ধ হয়েছিলেন। তারা দুজনে দুজনের সমস্ত রকম লড়াইতে শামিল ছিলেন, একে অন্যের ওঠাপড়া ঝড় ঝাপটা হাসি কান্নার সঙ্গী ছিলেন, তবে বৃহস্পতিবার থেকে রাস্তা মোড় নিল অন্য দিকে। এবার শুরু হলো বুদ্ধহীন-মীরার লড়াই একার লড়াই একার যাপন।
সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, সাংবাদিক: বরাবরই বড্ড সাধারণ জীবন যাপন করেছেন মীরা ভট্টাচার্য (Mira Bhattacharya)। তাকে দেখে বোঝা যেত না মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী তিনি। বরাবরই বড্ড সাধারন বড্ড ছাপোষা তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে আশঙ্কায় মীরা ভট্টাচার্য হারিয়ে ফেললেন তার জীবনের অন্যতম কমরেড, অন্যতম লড়াইয়ের সাথীকে। পাম এভিনিউয়ের ওই বাড়িটায় আজ থেকে শুরু হলো মীরা ভট্টাচার্যের একলা জীবনের যাপন।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী হয়েও আজীবন আড়ম্বরহীন জীবনই কাটালেন যে জীবন ছিল মাটির কাছাকাছি। যে জীবনে জৌলুস না থাক কিন্তু পাশে থাকা ছিল। আর এই পাশে থাকার এই অধ্যায়টা আজ থেমে গেল। আজ বুদ্ধহীন মীরাকে সকাল থেকেই বড্ড বিধ্বস্ত বড্ড পরিশ্রান্ত লাগছিল।
পাম অ্যাভিনিউয়ের ছোট্ট ফ্ল্যাটটার আয়তন বড় জোর ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ স্কোয়ার ফিটের হবে, বুদ্ধদেববাবু নিজে ওই ঘর বদলাতে চাননি কোনওদিন। আর তার এই ইচ্ছাকে আজীবন সম্মান জানিয়েছেন মীরাদেবীও। এই ঘরেই কত ওঠাপড়া আর এই ঘরেই হল চিরবিচ্ছেদ।
এদিন যখন বাড়ি থেকে বুদ্ধবাবুর মরদেহ বের হয়েছে, মীরা ভট্টাচার্যের দৃষ্টিতে শুধুই শূন্যতা। শববাহী শকটের সামনের দিকে বসে পিস ওয়ার্ল্ড অবধি গিয়েছেন।নীরব হয়ে শুধুই দেখেছেন সবটা! আবার সেখান থেকে বেরিয়ে ফিরেছেন পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে। মীরা ভট্টাচার্য ছিলেন বুদ্ধবাবুর ছায়াসঙ্গী। এদিন সেই সঙ্গীকে ছেড়ে মীরা যখন বাড়িতে ঢুকছেন, সারা শরীর আর মন জুড়ে বিষন্নতা।
যে মীরাদেবী দাঁতে দাঁত চেপে এতগুলো বছর অসুস্থ বুদ্ধবাবুর পাশে থেকে লড়ে গিয়েছেন, আজ তাঁকে বড্ড অবসন্ন দেখাচ্ছে। আজ তিনি বড্ড একলা, এক্কেবারে একা। এর আগে যতবার বুদ্ধবাবুকে নিয়ে পাম অ্যাভিনিউয়ের ঘর থেকে হাসপাতালে পৌঁছেছে অ্যাম্বুল্যান্স, সঙ্গে সেই মীরা। আর তাই বোধহয় আজ বুদ্ধদেববাবু তার শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করলেন তার মীরার হাত ধরেই।