সহেলী দত্ত, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আরজি করে ডাক্তারি পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল হয়েছে রাজ্য থেকে দেশ। তবে একাধিক জুনিয়র চিকিত্সক ও মৃতার পরিবারের দাবি, এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটনা কেবলমাত্র একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব না। অভিযোগ এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে একাধিক জন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে একাধিক নমুনা। সংগ্রহ করা নমুনার সঙ্গে সঞ্জয়ের ডিএনএ ম্যাচ আপ করানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ।
নিহত পড়ুয়ার দেহ থেকে নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে একাধিক টিস্যু। শরীরে লেগে থাকা রক্তের নমুনা। সেমিনার হলের ভেতর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে একাধিক মাথার চুলের অংশ, আঙুলের নখ। সূত্রের খবর, সমস্ত নমুনা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ইতিমধ্যে ফরেন্সিক ডিপার্টমন্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া যাবে ঘটনার দিন রাতে সঞ্জয় ছাড়া আর কেউ সেমিনার হলে উপস্থিত ছিল কেন।
এছাড়া তরুণীর পোস্ট মর্টাম রিপোর্ট থেকে মেলে একাধিক তথ্য। যেখানে বলা হয়েছে, তরুণীর গাল, গলা, ঠোঁটে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। থাইরয়েডের কার্টিলেজ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষতের প্রমাণ মিলেছে। অ্যান্টিমর্টেমে বিপুল পরিমাণ রক্তপাত হওয়ায় হাইমেন পর্যন্ত ফেঁটে যায়। গলার একটি হাড় ভাঙা পাওয়া যায়।
তবে ডিএনএ রিপোর্ট আসার পরই শনাক্ত করা যাবে অপরাধীকে। আদালতে ডিএনএ প্রমাণ হিসেবে বেশি নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হয়। এই কারণে টিস্যু নমুনাগুলি প্রায়শই সেই ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়, যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। ত্বকের অংশ, রক্তের ফোঁটা, চুল, লালা সবের মধ্যেই ডিএনএ থাকে। এই ডিএনএ দিয়েই একজন অপরাধীকে শনাক্ত করতে যথেষ্ট। এর জন্য প্রথমে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ডিএনএ-এর মাত্র এক ন্যানোগ্রাম সাধারণত ভালো তথ্যের জন্য যথেষ্ট। তবে চুল দ্বারা ডিএনএ পরীক্ষা কিছুটা হলেও আলাদা। ফরেন্সিক বিজ্ঞানীদের মতে, চুলের ভেতর থাকা নান রকমের প্রোটিনই এক জনের চুলকে অন্য জনের চুল থেকে আলাদা করে দেয়। আবার একই ধরনের প্রোটিন কারও চুলে কম থাকে আবার কারও চুলে বেশি থাকে। তবে এই ক্ষেত্রে কিছু খামতিও রয়েছে। অন্যান্য ডিএনএ টেস্টের তুলনায় চুল দ্বারা ডিএনএ টেস্ট অনেকটাই কার্যকরী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।অর্থাৎ আরজিকর ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া এখন ডিএনএ-এর এই টেস্টগুলির উপর অনেকটাই নির্ভর করছে। তরুণীর মৃত্যুর পিছনে শুধু সঞ্জয় দায়ী না যুক্ত আছে আরও অনেকে তাও ডিএনএ টেস্ট দ্বারাই জানা সম্ভব হবে।
ঘটনায় এখনও বেশ কয়েকজনকে তলব করেছে লালবাজার পুলিশ। চলছে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ। চেস্ট মেডিসিন বিভাগের হেড, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার, ৭ জুনিয়র ডাক্তার, কর্মরত পুলিশ, সিভিক, সোশ্যাল মিডিয়ায় উস্কানিমূলক পোস্টের জন্য সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ জনকে তলব করা হয়েছে। অন্য ফ্লোরের লোকজনকেও ডাকা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তবে হাইকোর্টের নির্দেশে এবার আরজিকরকাণ্ডের তদন্ত ভার দেওয়া হল সিবিআইকে। ঘটনার সমস্ত নথি সিবিআইকে হস্তান্তরের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। ৩ সপ্তাহ পর মামলার পরবর্তী শুনানি।