অনুসূয়া দাস, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ জন্ম ১৯৪৪ সালের পয়লা মার্চ, কলকাতায় । প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক । কলেজে থাকাকালীন কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগদান। খাদ্য আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ। ১৯৬৮ সালে ডি.ওয়াই.এফ.আইয়ের সাধারণ সম্পাদক।১৯৭৭ সালে প্রথম বিধানসভার সদস্য।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর দীর্ঘ আড়াই দশক মুখ্যমন্ত্রীত্বের পর বাংলার বাম রাজনীতির মুখ্য নেতা হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি প্রথমেই শিল্পের উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। বাংলার যুব সম্প্রদায়কে কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। খাদ্য আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রথম নির্বাচিত হন।
১৯৮২ সালে কাশীপুরে পরাজিত হওয়ার পরে ১৯৮৭ সালে যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে দাঁড়ান। ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি এই কেন্দ্র থেকেই যেতেন। ১৯৯৬ সালের মধ্যে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছিলেন। ২০০০ সালে ততকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু অসুস্থ হওয়ার পর পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম উঠে আসে।
২০০১ সালে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হন। ক্ষমতায় এসে তিনি প্রথমে বাংলার শিল্পের প্রসারে মন দেন। সেই লক্ষ্যে বিদেশি লগ্নি টানার চেষ্টা করেন। তাঁর সময় তথ্য প্রযুক্তির শিল্প উন্নতির শীর্ষে পৌঁছেছিল। তিনি শিল্পের প্রসারে কৃষি জমি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শুধুমাত্র একজন দক্ষ প্রশাসক ছিলেন, এমনতা নয়, তিনি ছিলেন দিশা।
কলকাতার পাম অ্যাভিনিউতে ২ কামরার ফ্ল্যাট তাঁর বড় প্রিয় ছিল। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাইপো কৈশোরের পড়াশোনা শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়ে।বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একাধারে দক্ষ নেতা, প্রশাসক এবং সুবক্তার পাশাপাশি লেখক ও সংস্কৃতি মনোষ্ক হিসাবেও পরিচিত ছিলেন।
১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর বাংলার সিনেমা ও থিয়েটারের উন্নতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক বইমেলা ও চলচ্চিত্র উত্সবের তিনি জনক। নাতসির জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু, স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা ইত্যাদি পুস্তকের লেখক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
১৯৯৩ সালে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। পরে অবশ্য ফের মন্ত্রী হন। তাঁর লেখা দুঃসময়ের নাটকের নানান কথা থাকতে পারে এই অনুমানে নাটকটি ঘিরে বঙ্গ রাজনীতিতে তুমুল কৌতুহল তৈরি হয়েছিল। তাঁর মুখ্যমন্ত্রীত্বের দ্বিতীয় দফায় রাজ্যের ছেলেমেয়েদের চাকরির লক্ষ্যে তিনি শিল্পায়নকেই পাখির চোখ করেন।
২০০৭ সালে সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানার জন্য টাটাদের লগ্নি। ২০০৮ সালে নন্দীগ্রামে সালেম গ্রুপের প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হা ব। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রস্তাবিত নলেজ হাব ও হেলথ হাব।২০১১ সালে নির্বাচনে পরাজয়।
২০০৬ সালে ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ২৩৫টি আসনে জয় পেয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে তিনি শিল্পায়নে বিশেষ নজর দেন। সেই লক্ষ্যে তিনি সিঙ্গুরের কৃষি জমিতে টাটা মোটরসের হাতে জমি তুলে দেন। তবে এর ফলে তিনি প্রবল বিরোধীতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অভিযোগ উঠেছিল কৃষি জমিতে শিল্প করা যাবে না। শুধু এই নয়। জমি বন্টন নিয়েও নানা অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। বিরোধীতার পর সিঙ্গুরে কারখানার কাজ থমকে যায়। অন্যদিকে নন্দীগ্রামে প্রস্তাবিত কেমিক্যাল হ্যাব গড়তে চাইলে সেখানেও প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয়।
২০০৭ এর ৬ই মার্চ পুলিশের গুলিতে ১৪ জন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়। তার প্রভাব পড়ে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। বামফ্রন্ট ২০১১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়। ক্ষমতার পালাবদল ঘটে যায় রাজ্যে।
তাঁর শিল্পায়নের নীতিতে হয়তো গলদ ছিল না। তবে সেই নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে তীব্র সমালেচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। ২০০৬-র নির্বাচনে যে বামফ্রন্ট ২৩৫ আসনে জিতে ক্ষমতায় এসেছিল, মাত্র পাঁচ বছরে সেই জন সমর্থনের গ্রাফ নিচে নেমে যায়। এখানেই বুদ্ধদেবের ট্যাজেডি। তাঁর শিল্প ভাবনা যে প্রাসঙ্গিক, তা সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বুঝিয়ে দেয়।