কেউ চাইছে আশ্রয় দিতে, কেউ চাইছে বিপাকে ফেলতে। শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ কঠোর অবস্থানে অনড়। তবে দুই দেশের ভিন্ন অবস্থান। শাঁখের করাতের মতো অবস্থায় মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা।
ভারত-বাংলাদেশ দড়ি টানাটানি
শেখ হাসিনা নিজে না চাইলে তাঁকে অন্যত্র পাঠানোর পরিকল্পনা নেই ভারত সরকারের। এদিকে বাংলাদেশ সরকার বারবার প্রশ্ন তুলছে, কেন ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে? এমনকি যতদিন হাসিনা ভারতে থাকবেন, ততদিন ভারত ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না বলেও বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও শর্ত মেনে ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগের মতো শুরু করতে আগ্রহী নয়।
ভারত কি চায় ?
এককথায় হাসিনার প্রকৃত আশ্রয়দাতা হয়েই থাকতে চাইছে ভারত সরকার। মহম্মদ ইউনুসের সরকার যদি শর্তহীনভাবে ভারত ও বাংলাদেশের যাবতীয় সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে চায়, একমাত্র তাহলেই ভারত হাত বাড়াবে। বরং ভারতই কড়া শর্ত দিচ্ছে, হিন্দু নির্যাতন বন্ধ করতে কঠোর হতে হবে ইউনূসকে এবং ভারত বিরোধী চক্রকে দমন করে থাকতে হবে।
হাসিনার নামে মামলা
একের পর এক মামলা দায়ের হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা সহ অন্তত ২৭ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কি চায় ?
এই আবহে কার্যত ভারতকে চাপে ফেলতে হুঁশিয়ারি দিল বিএনপি। তাদের দাবি, বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার বিচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই বাংলাদেশ সরকারের হাতে হাসিনাকে আইনিভাবে তুলে দেওয়ার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল বলেন, হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এই দেশের মানুষ তাঁর বিচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই ভারতের কাছে অনুরোধ অবিলম্বে তাঁকে বাংলাদেশের সরকারের হাতে হস্তান্তরিত করুন।
হাসিনার ভারতে থাকা কি অবৈধ?
শেখ হাসিনাকে ভারত অবৈধভাবে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে বলে বারবার অভিযোগ তুলছে বাংলাদেশ। তবে সেই অভিযোগের বৈধতা নিয়েই পাল্টা প্রশ্ন তোলার জায়গা রয়েছে ভারতের কাছে। কারণ শেখ হাসিনার ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট এখনও বৈধ। ভারতে আসার পর থেকে তিনি এই দেশে রয়েছেন যে কূটনৈতিক প্রটোকলে সেটির নাম ‘অ্যামেন্ডেড ট্র্যাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট’। ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে ভিসা ফ্রি রেজিমের একটি অধ্যায়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই সমঝোতা অনুযায়ী হাসিনাকে ভারত মোট ৪৫ দিন এদেশে রাখতেই পারে বৈধ প্রটোকলে। শুধু তাইই নয়, এরপরও যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে এক্সেটেন্ডেড টেম্পোরারি স্টে প্রথায় হাসিনাকে রাখা অবৈধ হবে না।
শেখ হাসিনাকে বাগে আনতে চাইছে বাংলাদেশের বিএনপি। অন্যদিকে ভারত চাইছে অতিথি হাসিনা এখানে যতদিন ইচ্ছে থাকতে পারেন। কিন্তু হাসিনা কি চাইছেন। আর হাসিনার চাওয়া না চাওয়ার ওপর কি আদৌ নির্ভর করছে সবটা ,নাকি পদ ও দেশ ছাড়ার পর সবটাই তাঁর হাতের বাইরে বেরিয়ে গেছে। প্রশ্ন অনেক। তবে উত্তর দেবে সময়। কেউ দিতে চাইছে মুজিবকন্যার ইচ্ছের দাম, তো কেউ হাসিনাকে বাগে আনতে চাইছে। এই দড়ি টানাটানিতে কে জেতে সেটাই দেখার।
তবে বিপদের সময় যে ভারত হাসিনাকে ছেড়ে দেবে না, তা স্পষ্টই বুঝিয়ে দিচ্ছে ইঙ্গিতে।