অনুসূয়া দাস, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ এ এক অন্য ১৫ অগাস্ট। আগের রাতেই দেশ স্বাগত জানাল মোমবাতির আলো ও মুর্হুমুর্হু স্লোগানে। সেই রাত ছাপিয়ে যায় কার্যত দিনের কোলাহলকেও। এইরকম একটা রাতের সাক্ষী বোধ হয় আগে কেউ কখনও থাকেননি। মহানগরের রাজপথ থেকে জেলার অলিগলি কাঁপিয়ে বেরলো একটাই স্লোগান ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। ছিল না কোনও বয়সের বেড়াজাল। বিবেকের টানে সবাই নেমে এসেছিল রাস্তায়। কোনও নরম সুরে নয়, দৃঢ় কন্ঠে বিচারের দাবি জানান মহিলারা। তবে শুধু মহিলারা নন, মিছিলে পা মেলান পুরুষরাও। এই বিশাল মিছিলে দুরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও দেখা যায় না কোনও রাজনৈতিক পতাকা। দেখা যায় দেশের প্রতি ভালোবাসা, সমাজ নিয়ে চিন্তা। হাতে মোমবাতি, কাঁধে দেশের পতাকা জড়িয়ে মিছিলে দেখা যায় অনেককেই। মোমবাতির আলোয় ত্রিরঙা পতাকা যেন আরও উজ্জ্বল, আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে।
গভীর রাতের সংজ্ঞাও যেন পাল্টে দিল ১৪ অগাস্টের রাত। এ যেন গর্জে ওঠার রাত। ১৪ অগাস্টের রাত-পথ যেন ইতিহাসে নতুন গল্প লিখল। যদিও তা গল্প হলেও সত্যি। বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে এ এক অন্য স্বাধীনতা দেখল ভারতবর্ষ।
এইরকমই এক ১৫ অগাস্টে এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী ছিল বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ভোর পাঁচটা থেকে সাতটার মধ্যে ধানমুন্ডির ৩২-এর বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে। নিহত হন শেখ মুজিবুর রহমান-সহ ৩৬ জন। সেই বাংলাদেশে এখন পতন ঘটেছে মুজিব কন্যা হাসিনা সরকারের। তার আগে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জেগে ওঠে পড়শি দেশ বাংলাদেশ। সেই আন্দোলন থামাতে পথে নামে পুলিশ। চলে গুলি। ঝড়ে রক্ত।
১৪ অগাস্টের সন্ধেতে এই বাংলাদেশের কথা উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আরজিকরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে।
তরুণী চিকিতকের মৃত্যুতে ১৪ অগাস্ট রাতে গণজাগরণ মহানগর থেকে জেলায়। এরইমাঝে দুষ্কৃতী তাণ্ডব চলল আর জি করে। শ্যামবাজার মোড়ের আন্দোলনের গতি প্রকৃতি বুঝতে আকাশে উড়তে দেখা যায় ড্রোন ক্যামেরার। নামানো হয় ব়্যাফ। চলে কাঁদানে গ্যাস। অরাজনৈতিক এক প্রতিবাদী মিছিলে কেন চলল হঠাৎ কাঁদানে গ্যাস? কেন চলল ছত্রভঙ্গের চেষ্টা? এমনই প্রশ্ন তুললেন মিছিলে পা মেলানো মহিলারা। এই প্রশ্নগুলি নিয়েই স্বাধীনতার ৭৭ বছর পর এক ১৫ অগাস্টের স্বাধীনতার সূর্য দেখল ভারত।