সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশ শাসন করার পর শেখ হাসিনাকে বিদায় নিতে হল। ছাত্র ও গণআন্দোলনের মুখে তাঁর শাসনের পতনের পিছনে একগুঁয়েমি, অহঙ্কার ও অতিআত্মবিশ্বাসকেই দায়ী করা হচ্ছে। একক কর্তৃত্বের শাসনে সম্পূর্ণ ভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। এই পরিস্থিতিতে সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়ার পর তড়িঘড়ি আকাশপথে পলায়ন করেন হাসিনা। বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন হাসিনা। তবে প্রথম থেকেই এই সিদ্ধান্তে প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পরিস্থিতিও সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। হাসিনা চেয়েছিলেন দেশ ছাড়ার আগে জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ সম্প্রচার করতে। কিন্তু ততক্ষণে আন্দোলনকারীরা বাংলাদেশ গণভবনের দিকে এগোতে শুরু করেছিলেন। ৪৫ মিনিটের মধ্যেই ওই ভিড় গণভবনে পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই সম্প্রচার করার জন্য হাসিনার ভাষণ রেকর্ডের আর ঝুঁকি না নিয়েই তড়িঘড়ি তাঁদের তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরে আনা হয়। সোমবার বিকেলে দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদে ভারতীয় বায়ুসেনা ঘাঁটিতে পৌঁছন তিনি। সূত্রের খবর, দিল্লি থেকে লন্ডনের যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
হাসিনার উত্থান-পতন একনজরে দেখে নেওয়া যাক,
২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭
বর্তমান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম। বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা। পাঁচ ভাই-বোনের সবার বড় হাসিনা। শিক্ষা আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯৬৬
ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে যোগ। সাবেক বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সহ-সভাপতি হয়েছিলেন।
১৯৬৭
এম এ ওয়াজেদ মিঞার সঙ্গে বিয়ে, দম্পতির দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
১৫ অগাস্ট, ১৯৭৫
সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত মুজিবর-সহ তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা ইউরোপে থাকায় প্রাণে রক্ষা। ভারত, বেলজিয়াম ও নানা দেশে আশ্রয় হাসিনার।
১৯৮১
বাংলাদেশে ফিরে আওয়ামী লিগের হাল ধরেন হাসিনা
১৯৮৬-৯০
বিরোধী নেত্রী হিসেবে রাজনৈতিক আন্দোলন। এরশাদ সরকারের পদত্যাগ।
১৯৯১
প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লিগ। স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার।
১৯৯৬
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা বাতলে দিলেন হাসিনা। জাতীয় নির্বাচনে জয়। ২০০১ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদে, ওই বছরই ভোটে হার।
২০০৪
ঢাকায় গ্রেনেড হামলা, অল্পের জন্য় রক্ষা শেখ হাসিনার।
১৬ জুলাই, ২০০৭
বাসভবন সুধা সদন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার
১১ জুন, ২০০৮
প্যারোলে মুক্তি, চিকিত্সার জন্য আমেরিকা যাত্রা। পরে দেশে ফিরে ভোট-প্রস্তুতি।
২০০৮
জাতীয় সংসদে আওয়ামী লিগের বিপুল জয়। ২০০৯-এ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ
৫ জানুয়ারি, ২০১৪
বিতর্কিত ভোটে ফের জয়
২০১৯, ২০২৪
দুবারই ভোটে জয়। তবে দুটি নির্বাচনই ‘প্রহসন’ বলে দাবি বিরোধী শিবিরের।
৫ অগাস্ট, ২০২৪
ইস্তফা ও দেশত্যাগ শেখ হাসিনার
টানা ১৫ বছর শাসনের অবসান। দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী থেকে দেশ ছেড়ে পলায়ন। এতদিন ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও, হাসিনার বিরোধীরা ক্রমাগত তাঁকে ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী হওয়ার অভিযোগ এনেছে ও তাঁকে দেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলেও অভিহিত করেছে।