বাঁচিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘যত দিন আমি বেঁচে আছি, ততদিন তোমাদের কেউ ওঠাতে পারবে না।’ বৃহস্পতিবার বার বেলায় যখন শেষ বারের মতো পাম অ্যাভেনিউ এর বাড়ি থেকে প্রাক্তণ মুখ্যমন্ত্রীর মরদেহ বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন অদুরে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছিলেন ৫৭ পাম অ্যাভেনিউ বস্তির বাসিন্দা পুতুল ঘোষ।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- সময়টা আশির দশকের প্রায় শেষের দিক কি নব্বইয়ের শুরু হবে। পাম অ্যাভেনিউ তে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এর বাড়ির ঠিক পিছনেই থাকা বস্তিবাসীরা একযোগে দরবার করেন বুদ্ধবাবুর কাছে। তাঁর দরজার গিয়ে পুলিশের হাতে নিজেদের অভিযোগ জমা করেন ৫৭ ও ৫৯ পাম অ্যাভেনিউ এর বস্তিতে থাকা মানুষজন। তাঁদের অভিযোগ ছিলো কিছু মানুষ মাঝে সাজেই তাদের বস্তিতে এসে টাকা বিলোচ্ছে। বস্তিবাসীরা জানতে পারেন ওরা প্রোমোটারের লোকজন। ছলে বলে, টাকার লোভ দেখিয়ে বস্তি খালি করতে চাইছে তারা। ঠাঁই বাঁচাতে তাই তারা বুদ্ধবাবুর দারস্থ হন।
পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই এক বিকালে পুলিশ আসে তাদের বস্তিতে। ভয় পেয়ে যান বস্তি বাসীরা। কিন্তু পুলিশ এসে তাদের বলেন বুদ্ধবাবু তাদের সঙ্গে কথা বলবেন, তাই তারা যেন এখুনি বুদ্ধবাবুর বাড়ির সামনে চলে আসেন। শুনেই সবাই হাজির হন। বিকালে মহাকরণে যাওয়ার আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বস্তিবাসীদের সঙ্গে নিজেই কথা বলেন বুদ্ধবাবু। সব শুনে তিনি বলেন “যতদিন আমি বেঁচে আছি ততদিন আপনাদের কেউ বস্তি থেকে ওঠাতে পারবে না।” সেই সঙ্গে বুদ্ধবাবু এটাও বলেন যে, “যদি কেউ নিজে থেকে উঠে যায় তাহলে কিন্তু আমি কিছু করতে পারবো না।” শেষদিন পর্যন্ত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁর কথা রেখেছেন। কিন্তু ইদানিং আবার নতুন করে প্রোমোটারের লোকজন ঘোরাফেরা শুরু করেছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অসুস্থ থাকায় ইদানিং তাঁর কাছে আর যাওয়া হয় নি। বৃহস্পতিবার প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মরদেহ যখন শেষবারের মতো পাম অ্যাভেনিউ এর বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন একদিকে ত্রাতার মৃত্যু আর একদিকে ঠাঁই হারানোর আশঙ্কায় পুতুল ঘোষেরা।