রিয়া দাস, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মহাকাশের জগতে আরও একধাপ এগোল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। ১৯৮৪ সালের ৩ ত্রপ্রিল, ‘সোভিয়েত ইন্টারকসমস’ প্রোগামের অধীনে, সয়ুজ টি-১১ মহাকাশযানে চড়ে মহাকাশে গিয়েছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাক্তন পাইলট, উইং কমান্ডার রাকেশ শর্মা। এখনও পর্যন্ত তিনিই একমাত্র ভারতীয়, যিনি মহাকাশে পা রেখেছেন। আর তার ৪০ বছর পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে পা রাখতে চলেছেন, ভারতীয় বায়ুসেনার আরও এক অফিসার, গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র সঙ্গে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে ইসরো। আর সেই অভিযানের প্রাইম নভোশ্চর হিসেবে মহাকাশে উড়ে যাবেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। মহাকাশে পাঠানোর জন্য এখনও পর্যন্ত যাঁদের বাছাই করেছে ইসরো, শুভাংশু তাঁদের মধ্যে কনিষ্ঠতম। বায়ুসেনার আরেক কর্তা, গ্রুপ ক্যাপ্টেন প্রশান্ত বালকৃষ্ণণ নায়ার থাকবেন ব্যাকআপ মিশন পাইলট হিসেবে। অর্থাত্ শেষ মুহূর্তে কোনও কারণে গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুক্লা মহাকাশে যেতে না পারলে, গ্রুপ ক্যাপ্টেন নায়ার যাবেন নাসার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে।
বীরত্ব ও আত্মত্যাগের বীরগাথা
শুভাংশুর জন্ম উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে, ১৯৮৫ সালের ১০ অক্টোবর। ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি-র ছাত্র ছিলেন। ভারতীয় সেনাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের বীরগাথা পড়তে পড়তেই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেবেন। প্রায় ১৮ বছর আগে ২০০৬ সালের ১৭ জুন ভারতীয় বায়ুসেনায় যুদ্ধবিমান বিভাগে যোগ দেন। যুদ্ধবিমান চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে শুভাংশুর। ২০০০ ঘণ্টা বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৯৯৯ সালে, কার্গিল যুদ্ধের সময় গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুক্লার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।
গ্রুপ ক্যাপ্টেন নায়ার এ ক্যাটেগরির উড়ান প্রশিক্ষক, যা একজন পাইলটের সর্বোচ্চ কৃতিত্ব। ৩০০০ ঘণ্টা উড়ানের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। Sukhoi-30, MKI, MiG-21, MiG-29, Hawk, Dornier, AN-32 বিমান উড়িয়েছেন। আমেরিকার স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষণ নেন, ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, আবার তামিলনাড়ুর ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর্স স্কুলের সঙ্গেও যুক্ত। Sukhoi-30MKI স্কোয়াড্রনের নেতৃত্বে ছিলেন একসময়। ভারত থেকে এখনও পর্যন্ত একজন নভোশ্চরই মহাকাশে গিয়েছেন, উইং কামান্ডার রাকেশ শর্মা। ১৯৮৪ সালে ইন্দো-সোভিয়েত অভিযানে শামিল ছিলেন তিনি। এবার সেই তালিকায় শুভাংশুর নাম শামিল হওয়ার অপেক্ষা।
মহাকাশ বিশেষজ্ঞদের মতে, শুভাংশুকে অভিযানের জন্য বাছাই করে একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরো। নাসা ও ইসরো-র সঙ্গে HUMAN SPACE FLIGHT CENTRE (HSFC) মহাকাশ উড়ান চুক্তি করেছে। সেই চুক্তির আওতায় আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছবে Axiom-4 মহাকাশযান। Axiom-4 আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে চতুর্থ বেসরকারি অভিযান। সেই অভিযানেই গগনযাত্রী শুভাংশু এবং নায়ারকে বাছাই করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরো। এই অভিযানের জন্য অগাস্টের প্রথম সপ্তাহেই গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুক্ল এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন নায়ারের প্রশিক্ষণ শুরু হবে।