সিগারেট, বই পড়া আর গান ছিলো তাঁর সবচেয়ে পছন্দের অবসর যাপন। অনেকবার সিগারেট ছাড়ার কথা বলেও কথা রাখেন নি তিনি। সন্তান সুচেতন এর অনেক পীড়াপীড়ির পর কমিয়ে দিয়েছিলেন সিগারেট খাওয়া। তবে সিওপিডি যখন তাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে সেই সময় একপ্রকার বাধ্য হয়েই সিগারেট ছাড়েন তিনি। তারপর বইকেই আরো বেশি আঁকড়ে ধরেন। কিন্তু চোখের সমস্যা তাঁকে তাঁর প্রিয় বই এর থেকেও দূরে সরিয়ে দেয়। তবে থেমে থাকেনি গান শোনা। কান পেতে শুনতেন খবর, আর শুনতেন রবীন্দ্রনাথের গান। জানালেন তাঁর সর্বক্ষণ দেখাশোনা করার মানুষ হারান অধিকারী।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- শেষ চার বছর ধরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কে দেখাশোনা করতেন হরেন ও শম্ভু নামে দুটি ছেলে। তাঁকে ওষুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে বুদ্ধবাবুর সব কাজই করতে হতো এই দু’জনকে। পালা করেই এটা করতেন তারা। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকালে একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বুদ্ধবাবুর একদম পাশেই ছিলেন বছর তিরিশের হরেন অধিকারী।
এদিন প্রয়াত প্রাক্তণ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মরদেহ শেষবারের মতো পাম অ্যাভেনিউ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর হরেন অধিকারী জানান এই চার বছর বুদ্ধবাবুকে খুব কাছ থেকে দেখা তার অভিজ্ঞতার কথা।
সন্তান স্নেহে হরেন কে দেখতেন বুদ্ধবাবু। একথা জানিয়ে হরেন বলেন, “অনেক সময় আমার বাড়ির খোঁজ নিতেন। বাড়িতে কে কে আছে, কি করে, সবার কথা জানতে চাইতেন।” হরেন ই জানান “প্রথম প্রথম তো উনি টিভি দেখতেন, খবর শুনতেন। আর রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে উনি খুব ভালোবাসতেন। রবীন্দ্রনাথের বাইরে উনি কোনো কিছু ভাবতে পারতেন না। রবীন্দ্র সংগীতের মধ্যেই উনি পড়ে থাকতেন। যতদিন উনি সুস্থ থাকতেন ততক্ষণ উনি শুধু রবীন্দ্র সংগীত ই শুনতেন। ঘরে একটা বড় রেডিও আছে, তারমধ্যে শুধু রবীন্দ্র সংগীত ই ভরা রয়েছে। সারাদিন শুধু সেটাই শুনতেন।” হরেন এই কথা শুনতে শুনতে মনে হলো কি অদ্ভুত সমাপতন! গতকালই ছিলো ২২ শ্রাবন। রবীন্দ্রনাথের তিরোধান দিবস। আর ২৩ শ্রাবন সকালেই বুদ্ধবাবু পাড়ি দিলেন সেই সেখানের উদ্দেশ্যে যেখানে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং।