সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, সাংবাদিক: ৯ আগস্টের আরজিকরের ঘটনা এখন আর কারোরই অজানা নয়। আরজিকরের জুনিয়র চিকিৎসকের জন্য জাস্টিসের দাবিতে এই মুহুর্তে উত্তাল রাজ্য-দেশ-বিদেশ। কলকাতা জুড়ে গত এক মাস যেভাবে লাগাতার আন্দোলন মিছিল প্রতিবাদ হয়েছে তাতে করে বলাই যায় এই কলকাতাই পথ দেখিয়ে দিল আগামীর আন্দোলনের।
১৪ আগস্ট, কলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া এক প্রতিবাদ, যার নাম ছিল মেয়েরা রাত দখল কর। এমন প্রতিবাদ পন্থা কবেই বা হয়েছে! রাত যে কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় একটা মেয়ে তার কাজের জায়গা থেকে হোক বা যে কোন জায়গা থেকে হোক, সে নিরাপদে নিশ্চিন্তে কেন বাড়ি ফিরতে পারবে না? সেই বক্তব্য নিয়ে রাজ্য জুড়ে পথে নামলেন মেয়েরা। সারা রাত দিকে দিকে চলল সেই মিছিল। পা মেলালেন ৮ থেকে ৮০, সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ল দাবানলের গতিতে। আরও প্রাণ পেল জাস্টিসের দাবি।
তারপর প্রতিটা ক্ষেত্র থেকে মানুষ পথে নামলেন। আইটি সেক্টর থেকে শুরু করে বিজ্ঞানীরা, জ্যোতিষীরা থেকে শুরু করে শিক্ষকরা। পথে নামলেন সাংবাদিকরাও। এর বাইরেও নিয়মিত মিছিল হয়েছে রোজ।
পথে নামলেন তারকারাও। সংগীতশিল্পী থেকে শুরু করে বাচিক কিংবা নৃত্যশিল্পী, সিরিয়াল থেকে শুরু করে সিনেমার পরিচিত মুখরা সবাই সোচ্চার। দাবি একটাই আরজিকরের বিচার চাই। স্বস্তিকা মুখার্জি সোহিনী সরকার দেবলীনা দত্ত চৈতী ঘোষাল এরা নিজেদের সেলেব তকমা দূরে সরিয়ে হয়ে উঠলেন সাধারণ মানুষ। অবলীলায় রাস্তা বসলেন, রাত জাগলেন। শাসক বিরোধী স্লোগান দিলেন।
ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগান মহামেডান-কলকাতার এই তিন প্রধানের শত্রুতা সবারই অবগত। কিন্তু আরজিকর কাণ্ড সবাইকে এক সুতোয় বেধে দিয়েছেন। তাই মাঠের লড়াই মাঠেই রেখে হাত মেলাল তারাও। একসঙ্গে কলকাতার বুকে তারা স্লোগান তুলল “তিন প্রধানের এক স্বর জাস্টিস ফর আরজিকর”।
এর মধ্যেই আরও দুটো রাত দখলের কর্মসূচী হল। শ্যামবাজার থেকে যাদবপুর, সোদপুর থেকে হাওড়া সব জায়গা থেকে মানুষ নামলেন রাস্তায়। গোটা রাত জেগে গান স্লোগানে মুখরিত করে রাখলেন গোটা রাজ্য।
আসা যাক আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কথায়। তারা দাবি পূর্ণ করতে লালবাজার অভিযানে গেলেন। পুলিশ আটকালে রাস্তাতেই বসে পড়লেন, অবশেষে উর্দি বনাম এপ্রনের লড়াইয়ে জিতল এপ্রন। পুলিশ ব্যারিকেড সরালে মিছিল এগোল। সিপির কাছে গিয়ে তারই পদত্যাগের ডেপুটেশন দিলেন। এখানেই শেষ নয়, স্বাস্থ্য ভবন অভিযানে গিয়েও রাত জেগে রাস্তায় বসে তারা।
এর পাশাপাশি কলেজ স্ট্রিট জুড়ে চলছে লাগাতার আন্দোলন। কলেজ স্ট্রিট তো বিপ্লবের আতুড়ঘর। যেখানে লেখা থাকবে আরজিকরের জন্য জাস্টিস চেয়ে সোচ্চার হওয়ার দলিল।
সত্যিই এ এক অন্য কলকাতা। যে কলকাতা দেখিয়ে দিল সে লড়াই করতে ভোলেনি। এক সহ নাগরিকের জন্য বিচার ছিনিয়ে আনার দাবিতে সে রাতের পর রাত জাগতে প্রস্তুত।