অনুসূয়া দাস, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ গদি হারিয়েছেন ৫ ই অগাস্ট। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন এই দেশে। কিন্তু বাংলাদেশ ছেড়ে দিলেও সেই দেশ পিছু ছাড়ছে না শেখ হাসিনার। কারণ তাঁর দেশেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রয়েছে মোট ১২২ টি মামলা। যার মধ্যে ১১১টিই রয়েছে শুধুমাত্র হত্যা মামলা।
সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য আজও নিশ্চই আপনাদের চোখের সামনে ভাসে। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সংঘর্ষ ও সংঘাতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দ উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে পড়শি দেশ।এখন তাঁর প্রশাসনিক পদের আগে বসেছে প্রাক্তনের তকমা। তিনি এখন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেএখন ভুরি ভরি অভিযোগ। ঝুলছে মামলা। যে সব মামলাতেই অন্যতম অভিযুক্ত মুজিব কন্য়া। তবে এই মামলায় হাসিনা ছাড়াও রয়েছেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন।
সেই তালিকায় রয়েছেন হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ, যাকে অনেকেই জয় বলেও চেনেন। জয়ের পাশাপাশি রয়েছেন শেখ রেহানা। মানে হাসিনার বোন। যাকে নিয়েই দেশ ছেড়েছিলেন হাসিনা। তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। রয়েছেন প্রাক্তন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, টেলি যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।এখানেই তালিকা শেষ নয়। বিস্তর অভিযোগের তালিকায় রয়েছেন আরও নাম। রয়েছেন পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গির কবির নানক। রয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অব রশিদ ও প্রাক্তন কমিশনার হাবিবুর রহমান। রয়েছেন ডিএমপির প্রাক্তন যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের নামও।
যে আওয়ামী লীগের সর্বময় নেত্রী শেখ হাসিনা, সেই দলের বেশ কয়েকজন নেতার নামেও রয়েছে মামলা। রয়েছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের নাম। বাদ যাননি ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার হাবিবুর রহমানও হাসিনার বিরুদ্ধে যে ভুরি ভুরি অভিযোগ, তার মধ্য়ে অন্যতম, রাজশাহি পুঠিয়া জেলার হত্যাকাণ্ড।
সালটা ছিল ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি।রাজশাহির পুঠিয়া জেলায় স্বামীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৯ বছর পর থানায় এজাহার দায়ের করেন স্ত্রী। এই এজাহারে প্রধান আসামী হিসাবে নাম উঠে আসে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার । এছাড়াও এজাহারে উল্লেখ রয়েছে ১৮১ জনের নাম।
শুধুমাত্র রাজশাহির ঘটনা নয়, রয়েছে হৃদয় হত্যাকাণ্ডও। হৃদয় নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগেও শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রাক্তন সাংসদ মশিউর রহমান সজল সহ ৮৭ জনের নামে মামলা রুজু হয়। কদমতলি থানায় হত্যার মামলা করেন হৃদয়ের মা মরিয়ম বেগম। যেখানে বলা হয় ১৯ জুলাই রায়েরবাগ পদচারী–সেতুর কাছে হৃদয়কে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যার পেছনেও নাকি শেখ হাসিনার কলকাঠির নাড়াচাড়া।এরপরে আসা যাক যাত্রাবাড়ির ঘটনায়, যাত্রাবাড়ির কুতুবখালি এলাকায় বছর উনিশের ইমরান হোসেন নামে এক তরুণকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। সেখানেও অভিযুক্তের নাম সেই শেখ হাসিনা। তবে এই মামলাতেও তিনি ছাড়া অভিযুক্ত আরও ২৯৭ জন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ৫ অগাস্ট রাজধানীর শ্যামলির রিং রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মিরপুর বিসিআইসি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র নাসিব হাসান রিহান। তাঁর বাবা গোলাম রাজ্জাকের পক্ষে মামলা দায়ের করেন আইনজীবী এমএইচ গাজি তামিম।রাজধানীর বিভিন্ন থানায় রয়েছে এইরকম একাধিক মামলা। ঢাকার সিএমএম আদালতে রয়েছে দুটি হত্যা মামলা। এ ছাড়া রাজধানীর কদমতলী থানায় দুটি, যাত্রাবাড়ী থানায় একটি, উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি ও মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারা দেশে ১২২টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলার সংখ্যা ১১১।