অনুসূয়া দাস,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আদতে কতটা মধুর? নাকি দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্কের আড়ালে রয়েছে এক স্বার্থান্বেষী মনোভাব? এরই মাঝে বাংলাদেশিদের উইপোকা কেন বললেন অমিত শাহ? কেনই বা উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখার শাসানি দিলেন তিনি..
পড়শি দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বেশ মধুর।এই যেমন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর দেশ ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারতেই। তবে ওই যে উপর থেকে যে মধুর সম্পর্ক দেখা যায়, আদতে তা কি সত্যিই ? এ প্রশ্ন উঠেছে বারেবারে।বাংলাদেশিদের নিয়ে প্রায়শই কটুক্তি শোনা যায় দেশের রাজনৈতিক নানা স্তর থেকে।শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে তা যেন বেড়েছে বহুগুনে। কখনও উইপোকা আবার কখনও বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করার হুমকি ধেয়ে আসে বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে। এখানেই শেষ নয়, আবার কখনও উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখার মতো শাসানি সহ নানান আক্রমনাত্মক বক্তব্যও শোনা যায় ভারতীয় নেতাদের থেকে।
তবে কেন… বারেবারে বাংলাদেশিদের এই ভাবে টার্গেট করা হয়..?
বাংলাদেশিদের শাসানি দেওয়ার তালিকায় প্রথমেই যার নাম উঠে আসে, তিনি হলেন স্বরাস্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কী বলেছিলেন তিনি?
দলীয় সভাটি ছিল ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরে। সেখানে গিয়ে অমিত শাহের বক্তৃতার মধ্যে উঠে আসে এক বিতর্কিত মন্তব্য। তা হল বাংলাদেশিদের উল্টো করে ঝুলিয়ে দেওয়ার মতো শাসানি।
এই খবর চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফের আঙুল ওঠে ভারত-বাংলাদেশের সু-সম্পর্ক নিয়ে।
এখানেই প্রশ্ন ওঠে প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশ আদৌ কি ভারতের বন্ধু দেশ? নাকি এর অর্ন্তরালে রয়েছে এক বিশাল স্বার্থ।
স্বরাস্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এই বিতর্কিত মন্তব্যের পরে চুপ করে বসে থাকেনি ঢাকা। অমিত শাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয় ঢাকা।
তবে শুধুই যে অমিত শাহই বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন, তা নয়…অন্যান্য আরও রাজনৈতিক নেতাদের মুখে শোনা গিয়েছে এইরকম নানান মন্তব্য।
হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক গবেষকদের মতে একটা সময় পাকিস্তানকে লক্ষ্য করে যেরকম মন্তব্য করা হত, ঠিক সেই ধাঁচে মন্তব্য এবার ধেয়ে আসছে বাংলাদেশিদের উদ্দ্যেশে। গবেষকদের মতে ভারতের রাজনৈতিক নেতারা সবসময় এক অপর পক্ষ দাঁড় করানোর চেষ্টা করে থাকেন। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কাছে সেই অপর পক্ষ এবার মুসলমানেরা। তাই মুসলমানকেই রাজনৈতিক নেতারা বহিরাগত বলার চেষ্টা করেন। এতদিন তাদের কাছে অপর পক্ষ ছিল শুধুই পাকিস্তান। তবে বছর দশেক ধরে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশকে এবার টার্গেট করা হচ্ছে।
হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির গবেষকরা আরও জানান বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে তাঁরা যে রাজনীতি করেন, এটা পুরো পূর্ব ভারতেই চর্চা হয়। আগে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাতে হলেও সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশাতেও একই পরিকল্পনা করছেন হিন্দুত্ববাদীরা। এবার এই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে প্রচারের ফলে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা অন্যান্য রাজ্যে বিপদে পড়ছেন।
আর্ন্তজাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ ও কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশী মানুষদের নিয়ে এইরকম কুকথা ভারতের নেতারা অনেকসময় বলে থাকেন তাঁদের নিজেদের সমর্থক ও ভোটদাতাদের উদ্দেশ্য করে। বিশেষত নির্বাচনের আগে ভোটারদের মধ্যে এক মেরুকরণের প্রচেষ্টার জন্য এই কাজ করা হয়ে থাকেও বলে মনে করেন তিনি। ।বাংলাদেশি বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগেও বিভিন্ন সরকারের আমলে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা বাংলাদেশকে নিয়ে নানা কটুক্তি করেছেন। তবে এসব শুনেও, ঢাকার পক্ষ থেকে কোনও জোড়ালো প্রতিবাদ করা হয়নি। যার কারণে এই এইরকম মন্তব্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।