পৌষালী উকিল, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দুর্গাপুজোর রূপালি শস্যে ভরা স্বপ্নের পাতে চঁনা ফেলল ইউনুস সরকার। ধোঁয়া ওঠা সাদা ভাতে মুচমুচে ভাজা ইলিশের তেল দিয়ে মেখে খাওয়ার স্বাদ এবার ঘুচল। পশ্চিমবঙ্গের ইলিশপাতে বাগড়া বসিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসিনার দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয়ের পর থেকেই বাংলাদেশের ইলিশ রফতানি বন্ধ। যার জেরে এদেশের মানুষের ওপার বাংলার ইলিশ খাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে আগেই। সেই শঙ্কাই এবার সত্যি হতে চলেছে।
ইলিশে চালানে হাসিনা বনাম ইউনুস
যেখানে শুভেচ্ছার ইঙ্গিত হিসেবে শেখ হাসিনা প্রতি বছর আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে ভারতে ইলিশের চালান পাঠাতেন। রীতি ভেঙে ভারতে এবার ইলিশ পাঠাবে না ইউনুস সরকার। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতেই নাকি এবার ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হবে। এ বছর ভারতে কোনো ইলিশ রপ্তানি হবে না। এদিকে রফতানি নিষেধাজ্ঞার আসল লক্ষ্য ছিল অভ্যন্তরীণ দাম নিয়ন্ত্রণ করা এবং বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত পরিবারের নাগালের মধ্যে যাতে ইলিশ থাকে তা নিশ্চিত করা।
ইলিশ বিলাসে উলটপূরাণ
একেই পদ্মাপাড়ের ইলিশ পাতে পড়ছে না এরাজ্যের বাঙালির। তারমধ্যে আবার উলটপুরাণ। এপার বাংলার ইলিশই এবার নাকি যাচ্ছে ওপার বাংলায়। বাংলাদেশের ইলিশ এবছর কতটা আসবে বা আদৌ আসবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত। ঘাটতি পূরণে বাজার ছেয়েছে মুম্বই, গুজরাত কিংবা মায়ানমারের ইলিশে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের চাহিদা মেটাতে ইলিশ আমদানি করতে হয় প্রতি বছরই। তবে অনেকের জানা নেই, দীঘা, ডায়মন্ডহারবার কিংবা ফ্রেজারগঞ্জের ইলিশ পাড়ি দেয় অন্য দেশেও। সেই তালিকায় যেমন রয়েছে ইংল্যান্ড, তেমনই আছে বাংলাদেশও।
গত বছর ইলিশ আমদানি
গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পদ্মার ইলিশের প্রথম চালান বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসে। বরিশাল থেকে পাঁচ টন ইলিশ নিয়ে ৯ টি পণ্যবাহী ট্রাক ভারতে আসে সে বার। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক দুর্গাপুজোর সময় শুভেচ্ছার ইঙ্গিত হিসেবে ৭৯ জন মাছ রপ্তানিকারককে ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ ভারতে পাঠানোর অনুমতি দেয় গত বছর। এবার রফতানি নিষিদ্ধ হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মাছ ব্যবসায়ীদের নির্ভর করতে হবে মায়ানমার ও ওড়িশা থেকে আসা ইলিশের ওপর।
ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা
জানা যায়, বিশ্বের ৭০ শতাংশ ইলিশ জন্মায় বাংলাদেশের পদ্মায়। সেখান থেকেই গোটা বিশ্বে ইলিশ রফতানি হত। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সে দেশের সরকার। যুক্তি ছিল, বেশি লাভের আশায় সব ইলিশ বিদেশে রফতানি করে দেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বাংলাদেশের মানুষই তার স্বাদ পান না। দেশের সম্পদ হওয়া সত্ত্বেও স্বাদ পেতে চাইলেই খসাতে হয় গ্যাঁটের মোটা টাকাও। তাই জারি হয়েছিল এই নিষেধাজ্ঞা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নাকি সেই নিষেধাজ্ঞা উঠেও যায়। তবে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকাকালীনও দুর্গাপুজোয় ভারতে ইলিশ আসত খোদ হাসিনার হাত ধরেই। তবে এবারের ছবিটা অন্য। দুর্গাপুজোয় ভারতে আসবে না ইলিশ, ঘোষণা করে দিয়েছে বাংলাদেশ।