পৌষালী উকিল, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ইজরায়েল হামাস যুদ্ধের বর্ষপূর্তি। এই এক বছরে কী দেখেনি ইজরায়েল নামের এই দেশ। এখনও পশ্চিম এশিয়ায় রোজের ঘুম ভাঙছে সাইরেনের শব্দে। ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি, গুলি, বোমা, বারুদ, রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র, রক্তক্ষয়, সারি সারি মৃতদেহ এসবে যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানকার মানুষ। যুদ্ধ কখনও থেমেছে, কখনও চাগাড় দিয়ে উঠেছে। কিন্তু জট থেকেই গিয়েছে। এ এমন এক যুদ্ধ যা কবে থামবে এটাই সংশয়ের। ইজরায়েলের যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব এতটাই যে তাতে যুক্ত হয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলিও। কোথায় গিয়ে থামবে এই যুদ্ধ ? আদৌ কি থামবে ? নাকি পাশে থেকে যুদ্ধের গতি বাড়াবে পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলি, প্রশ্ন অনেক।
পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধের এক বছরে লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলাকালে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেছে। বর্তমান ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি, আসুন জেনে নেওয়া যাক…
এই এক বছরে ইজরায়েলের ভূরাজনীতি, যুদ্ধ পরিস্থিতির অভিমুখ পুরোটাই পাল্টে গেছে। যুদ্ধের পট পরিবর্তন ঘটেছে। ইজরায়েল হামাস যুদ্ধ রূপ নিয়েছে ইজরায়েল হিজবুল্লা যুদ্ধে। এরই মধ্যে ইরান, হিজবুল্লা, ইরাকের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী, ইয়েমেনের হাউতি, সিরিয়ার বিভিন্ন গোষ্ঠী এই সংঘাতে জড়িয়ে গেছে।এই যুদ্ধে শুধু হামাসের ঘাঁটি প্যালেস্তাইন বা গাজা স্ট্রিপ নয়, ইজরায়েল হামলা চালাচ্ছে লেবাননের ওপরেও। এদিকে লেবাননে হিজবুল্লার ওপর আক্রমণের পাল্টা জবাবে মিসাইল হানা চালিয়েছে ইরানও। ক্রমশই জটিল হচ্ছে যুদ্ধ পরিস্থিতি।
এরইমধ্যে ফের নতুন করে হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল লেবানন। একদিকে ইজরায়েলের শহরে গোলাবর্ষণ করছে হিজবুল্লা, অন্যদিকে ইজরায়েলও বেইরুটে লাগাতার হামলা জারি রেখেছে।ইজরায়েলের হামলা থেকে পার পাচ্ছে না হামাসের ঘাঁটি গাজা স্ট্রিপও। সেখানে একটি মসজিদ লাগোয়া স্কুলে মিসাইল হামলা চালিয়েছে আইডিএফ। ঘটনায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হন। যদিও ইজরায়েলের দাবি, হামাস জঙ্গিদেরই নিশানা করে নিকেশ করা হয়েছে।হাত গুটিয়ে নেই হিজবুল্লাও। তারা ইজরায়েলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হাইফায় সেনা ঘাঁটিতে যুদ্ধ বিমান দিয়ে হামলা চালিয়েছে। বর্তমানে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি।
হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের ১ বছরে কী কী ঘটল? এর উত্তর জানতে ঠিক এক বছর আগে ফিরে যেতে হবে…
৭ অক্টোবর, ২০২৩: হামাস ইজরায়েলে ৭ হাজার মিসাইল হামলা একযোগে চালিয়ে প্রায় সাড়ে এগাড়োশো জনকে হত্যা করে। পণবন্দি করা হয় আড়াইশো জনকে। জবাবে সেদিনই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। কার্যত ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হয় গাজা। প্যালেস্তাইনের অন্যান্য অংশেও হামলা চলে। তারপর থেকেই ওই জায়গায় আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।প্রতিক্রিয়ায় হামাসের মিত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাও গাজাবাসীর পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা করে ইসরায়েলের সেবা ফার্ম অঞ্চলে হামলা চালায়। তারা ঘোষণা করে, গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত হামলা বন্ধ করা হবে না। তবে থেকে চলা এই লাগাতার হামলায় ইজরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত আরও প্রায় লাখ খানের মানুষ।একই সময় লেবাননে ইজরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে প্রায় ৪ হাজার মানুষ। আহত হয়েছে আরও কয়েক হাজার। এছাড়া, লেবাননে ইজরায়েলি হামলার কারণে ১ লক্ষ মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে। অপরদিকে, ইজরায়েলে হিজবুল্লার হামলায় ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।ইজরায়েলি বোমায় গাজার ৯০ শতাংশেরও বেশি ঘরবাড়ি, স্থাপত্য ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হামলা থেকে রেহাই পায়নি মসজিদ, স্কুল, হাসপাতাল, এমনকি আশ্রয়শিবিরও। ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে গাজার ১৯ লক্ষেরও বেশি বাসিন্দা। যারা জীবিত রয়েছেন, তারা খাদ্য, জল ও চিকিৎসার অভাবে ভুগছেন। অপুষ্টি, কলেরা সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গাজায় হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। গাজায় সংঘাতের বর্ষ পূর্তির দিনে গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বড় বড় শহরগুলোতে বিক্ষোভ-মিছিল করছেন যুদ্ধবিরোধীরা। এক বছর পূর্তির দিনে প্যারিস থেকে নিউইয়র্ক এবং তেহরান থেকে কেপটাউন বিশ্বের শত শত শহরে বিক্ষোভ করছেন যুদ্ধবিরোধীরা।
শান্তি চান গুতেরেস
রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি, পণবন্দিদের মুক্তি ও গোটা অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বার্তায় তিনি বলেন, ইসরায়েল ও প্যালেস্তিনিয়দের মধ্যে বিরোধের টেকসই সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে উভয় পক্ষ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশ একে অপরকে সম্মান করতে পারে এবং শান্তি ও মর্যাদার সঙ্গে একসঙ্গে বসবাস করতে পারে। এত রক্তপাত ও বিভাজনের মধ্যেও অবশ্যই আশা ধরে রাখতে হবে।