পৌষালী উকিল, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ ৬ বছর পর অবশেষে রাষ্ট্রপতি শাসনের অবসান হল ভস্বর্গে। মুখ্যমন্ত্রী পাচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীর। সেখানে এবার গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা হবে। রবিবারই কেন্দ্রের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে এই তথ্য জানানো হয়। শোনা যাচ্ছে, সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি সপ্তাহের শেষে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা।
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে ঠিক কী বলা হয়েছে ?
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন, ২০১৯-এর ৭৩ নং ধারা, ভারতীয় সংবিধানের ২৩৯ ও ২৩৯এ ধারা অনুসারে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর জারি করা নির্দেশ এবার জরুরি ভিত্তিতে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। অর্থাত্ মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের আগে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
নজরে ওমরই
সম্প্রতি এক দশক পরে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীরে। সেই নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাজিক ফিগার ভোট পেয়ে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে এনসি-কংগ্রেস জোট। এনসি বিধায়কেরা পরিষদীয় দলের নেতা হিসাবে সকলের সম্মতিতে বেছে নেন ওমর আবদুল্লাকে। এরপর গত শুক্রবার নিজের দলের ৪২ জন বিধায়ক, ছয় কংগ্রেস বিধায়ক, এক সিপিএম, এক আপ এবং কয়েকজন নির্দল বিধায়কের স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠি নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের লেফট্যানান্ট গভর্নর তথা উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহার সঙ্গে দেখা করে সরকার গঠনের দাবি জানান ওমর আবদুল্লা। কিন্তু কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচিত সরকারের ভূমিকার পাশাপাশি প্রশাসনে উপরাজ্যপাল বা কেন্দ্রের ভূমিকা ঠিক কতটা তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে রবিবার কেন্দ্রের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসনের অবসান ও মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেওয়ার কথা জানানো হয়। মূলত, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটিতে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করার কথা জানায় কেন্দ্র।
এক দশকের কাহিনী
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। সেই সময় সেখানে জারি হয়েছিল কার্ফু। কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং সেনায় ভরে গিয়েছিল গোটা উপত্যকা। তবে তারও আগে থেকেই সেখানে জারি ছিল রাষ্ট্রপতি শাসন।১০ বছর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচন। তারপর জম্মু ও কাশ্মীরে মেহবুবা মুফতির দল পিডিপির সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি। তবে সেই সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই বিজেপি সমর্থন প্রত্যাহার করেছিল মেহবুবা মুফতির থেকে।এর জেরে ২০১৮ সালে সরকার পড়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন মেহবুবা মুফতি। সেই বছর ১৯ জুন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় জম্মু কাশ্মীরে।তবে ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে দেওয়া হয়। বিশেষ মর্যাদা হারায় জম্মু ও কাশ্মীর। সেখান থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এমনকী রাজ্যের মর্যাদাও হারায় জম্মু ও কাশ্মীর। বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল। কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়। একটি জম্মু-কাশ্মীর, অন্যটি লাদাখ।
ওমরের আশা
এদিকে ভোটে জেতার পরই ওমর আবদুল্লা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রের এই মোদী সরকারের কাছে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের দাবি জানানো বোকামো। এই নিয়ে ওমর বলেছিলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান বদলাবে না। আমরা কখনই বলিনি যে ৩৭০ ধারার বিষয়ে আমরা নীরব থাকব বা এটি আমাদের জন্য আর কোনও ইস্যু নয়। কিন্তু আমরা জনগণকে বোকা বানানোর জন্য প্রস্তুত নই। আমি সবসময় বলেছি, যারা এই ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে, সেই লোকদের কাছ থেকে এটি ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করা বোকামি। এটা মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার মতো। তবে আমরা এই ইস্যুটিকে বাঁচিয়ে রাখব… আমরা আশা করি একদিন সরকার পরিবর্তন হবে। প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হবে এবং এমন একটি সরকার হবে যার সাথে আমরা এই বিষয়ে কথা বলতে পারব এবং জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য কিছু অর্জন করতে পারব।’
এক নজরে এবারের নির্বাচনের ফলাফল
এবারের নির্বাচনে ৯০ সদস্য বিশিষ্ট জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় কংগ্রেস এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের জোট ৪৮টি আসনে জিতেছে। এর মধ্যে ৪২টি আসনে জয়ী ন্যাশনাল কনফারেন্স, কংগ্রেস জয়ী ৬টিতে। আর পিডিপি জয়ী মাত্র ৩টিআসনে। আর বিজেপি এগিয়ে ২৯টি আসনে। এদিকে সিপিএম একটি আসনে জিতেছে জম্মু ও কাশ্মীরে। আম আদমি পার্টিও জয়ী একটি আসনে।
১৬ অক্টোবর শপথ গ্রহণ হতে পারে
জম্মু ও কাশ্মীরে সরকার গঠনের পথ এখন পরিষ্কার। ওমর আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ১৬ অক্টোবর শ্রীনগরে হতে পারে।