এক রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা আর আরেক রাজ্যে নতুন করে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন। ২০২৪, বছরের শেষ দুই রাজ্যের ভোটে এক চুম্বকে এটাই বিজেপি, কংগ্রেসের ভোট চিত্র। সদ্য শেষ হওয়া দুই রাজ্যের ভোটে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে ১-১ ফলে টাই হয়েছে। মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের ভোটেও কি ফল তেমনই হবে, নাকি লোকসভার ফলাফলের মতো এই দুই রাজ্য বিজেপিকে হতাশ আর কংগ্রেস কে উজ্জীবিত করবে। নাকি ফল হবে সম্পূর্ণ উল্টো। জানা যাবে ২৩ নভেম্বর।
সঞ্জু সুর নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- জম্মু কাশ্মীর ও হরিয়ানার ভোট পর্ব মিটেছে এখনও এক সপ্তাহও হয়নি। এরমধ্যেই আরও দুটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে দিলো নির্বাচন কমিশন। নভেম্বর মাসে বিধানসভা ভোট হতে চলেছে দু’দুটো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে। ঝাড়খণ্ডের ৮১ আসনের জন্য দুই দফায় ভোট হবে আগামি ১৩ ও ২০ নভেম্বর। পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের ২৮৮ আসনের জন্য ভোট হবে এক দফায়, ২০ নভেম্বর। ফল প্রকাশ ২৩ নভেম্বর।
২৮৮ আসন বিশিষ্ট মহারাষ্ট্র বিধানসভায় এই মুহূর্তে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি জোট। কিন্তু শেষ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে মহারাষ্ট্রে অনেকটাই অ্যাডভান্টেজ পরিস্থিতিতে রয়েছে কংগ্রেস, শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) ও এনসিপি (শরদ পাওয়ার গোষ্ঠী)। উল্টোদিকে একনাথ সিন্ডের সরকারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। জোটের বড় শরিক বিজেপি একক ক্ষমতায় অধিক বিশ্বাসী, আবার এনসিপির অজিত পাওয়ার গোষ্ঠীর ক্ষমতার প্রতিও তারা খুব একটা আশাবাদী নয়। ফলে মহারাষ্ট্রের ভোট ঘোষণার অনেক আগে থেকেই শিবাজী ভূমে উদ্ধব ঠাকরে বা শরদ পাওয়াররা অনেক বেশি সংগঠিত। প্রি-পোল অ্যালায়েন্স বা ভোট পূর্ববর্তী জোটে আসন বন্টনের কাজ সুচারুভাবে করার জন্য কংগ্রেস সহ বাকি দুই দলই যথেষ্ট আন্তরিক। ফলে সেই কাজটা এখনও পর্যন্ত অনেকটাই মসৃণ ভাবে এগোচ্ছে। যদিও ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর তিন নেতা অর্থাৎ একনাথ সিন্ডে (শিবসেনা সিন্ডে গোষ্ঠী), দেবেন্দ্র ফডনবিশ (বিজেপি) ও (এনসিপি-র) অজিত পাওয়ারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তু তু, ম্যায় ম্যায় লেগে রয়েছে, যার প্রভাব ভোট বাক্সে পড়তে পারে বলেই অনেকে মনে করছেন। তবে দেশের বানিজ্য নগরীর রাজ্যে ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রচার শুরু করলে কি হবে বলা মুশকিল। যদিও মহারাষ্ট্র বিকাশ আগাড়ি (কংগ্রেস, শরদ পাওয়ার ও উদ্ধব ঠাকরের দলের জোট)-কে পিছনে ফেলে ক্ষমতাসীন জোটকে ফের ক্ষমতায় নিয়ে আসতে গেলে মোদী-শাহ কে যে অনেক পাপড় বেলতে হবে তা বলাই যায়।
মহারাষ্ট্রের তুলনায় ঝাড়খণ্ডে অবশ্য তুলনামূলকভাবে কিছুটা আশাব্যঞ্জক জায়গায় রয়েছে বিজেপি। ৮১ আসন বিশিষ্ট ঝাড়খণ্ডে লড়াই মূলতঃ ‘ইন্ডিয়া'(I.N.D.I.A)জোট বনাম ‘এনডিএ'(NDA) জোটের। ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার (JMM) নেতৃত্বধীন সরকারে কংগ্রেস, আরজেডি ও বাম দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। কিছুদিন আগেই জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন এর গ্রেফতারি নিয়ে একজোটে বিরোধ প্রদর্শন করেছে এই জোটের নেতারা। আবার হেমন্ত সোরেন জেল থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরপরই ফের একবার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন। এবং হেমন্ত সোরেনের এই গ্রেফতারিকেই প্রচারের মূল ইস্যু করে ভোটে যেতে চলেছে ক্ষমতাসীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট। বিজেপি শুধু মাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই আদিবাসী নেতা হেমন্ত সোরেন কে গ্রেফতার করে হেনস্থা করেছে, এই মত ছড়িয়ে দিতে পারলে, আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়খন্ডে আখেরে লাভ কিন্তু ইন্ডিয়া জোটেরই। মাত্র মাস পাঁচেক আগে হওয়া লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত পাঁচটি লোকসভা আসনেই পরাজিত হয় বিজেপি। তবে রাজ্যের বাকি অংশে বেশ ভালো ফল করে তারা। চোদ্দোটার মধ্যে ন’টা লোকসভা আসন নিজেদের দখলে রাখে বিজেপি। যদিও ২০১৯ এর তুলনায় তিনটি আসন কম পায় তারা। তাসত্ত্বেও এই বিধানসভা নির্বাচনে যদি আদিবাসী কার্ড সঠিকভাবে খেলতে পারে তাহলে পাশা পাল্টালেও পাল্টাতে পারে। এক্ষেত্রে বিজেপির তুরুপের তাস হতে পারেন আরেক আদিবাসী নেতা চম্পাই সোরেন, যিনি হেমন্ত সোরেন জেলবন্দী হওয়ার পর ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। শোনা যায় হেমন্ত সোরেনের কথাতেই তাঁর আস্থাভাজন চম্পাই সোরেন কে মুখ্যমন্ত্রী করে জেএমএম। কিন্তু হেমন্ত সোরেন জামিন পেয়ে বাইরে বের হয়ে ফের একবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সময় চম্পাই সোরেন কে পদত্যাগ করতে হওয়ায় মনঃক্ষুন্ন হন তিনি।শেষে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন চম্পাই সোরেন। এখন অপমানিত আদিবাসী নেতা চম্পাই সোরেন এর আবেগ কে কতটা কাজে লাগাতে পারেন অর্জুন মুন্ডার দল, তার উপরেই নির্ভর করছে ঝাড়খণ্ডে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারবে কি না।