পৌশালী উকিল, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ২৩ নভেম্বর ঝাড়খণ্ড বিধানসভার নির্বাচনের ফলঘোষণা। তার আগে এবার বাগযুদ্ধের ময়দানে নেমেছেন দুই মুখ্যমন্ত্রী। আপাতদৃষ্টিতে নামে সামান্য পার্থক্য। বুঝতেই পারছেন কোন দুই মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলছি। ঠিকই ধরেছেন। একজন হলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, অপরজন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এক কথায় বলা চলে সম্মুখ সমরে হেমন্ত বনাম হিমন্ত।
দুই মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যেই এখন বাদানুবাদ চরমে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে দলের তরফে বিশেষ দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ঝাড়খণ্ডের মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরেই হেমন্ত ও হিমন্তের মধ্যেকার বিবাদে উঠে এসেছে একাধিক প্রসঙ্গ, তা হল– ইডি, সিবিআই, এনআরসি। এসবের মাঝে তোলপাড় হয়েছে ঝাড়খণ্ডের রাজনীতি। হেমন্ত সোরেন পদত্যাগ করে গিয়েছেন জেলে। মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্বভার নিয়েছিলেন সে সময়ে তারই দলের নেতা চম্পাই সোরেন। এরপর হেমন্তের জামিন, চম্পাইয়ের বিজেপিতে যোগদান। ফের ঝাড়খণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন হেমন্ত সোরেন। এই কয়েক মাসে বিশ্বাসভাজনের আস্থা হারানোও দেখে ফেলেছে ঝাড়খণ্ডের রাজনীতি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ছবি দেখে নিয়েছে ঝাড়খণ্ড। সরকারের গদি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। যার প্রভাব মিলতে পারে আসন্ন ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের ফলে।
ঝাড়খণ্ডের এই টালমাটাল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। তাই ঝাড়খণ্ডে বিরোধী থেকে শাসকের আসনে ফিরতে মরিয়া বিজেপি নেমেছে তাদের অতি পরিচিত কৌশল ‘অপারেশন লোটাস’-এ। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে গুরু দায়িত্ব দিয়েছে হিমন্তকে। দল দায়িত্ব দেওয়ার পরেই হিমন্ত সক্রিয় হয়ে নেমে পড়েছেন ভোটযুদ্ধের প্রাক্-প্রস্তুতি পর্বে। রাঁচী গিয়ে সরাসরি কাজকর্ম শুরু করেছেন তিনি। হিমন্ত বিশ্বশর্মার অনুরোধে হেমন্ত সোরেনের দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা ছেড়ে চম্পই সোরেন যোগ দেন বিজেপিতে। মোটের ওপর কৌশলী রাজনীতি নিয়েই এগোচ্ছেন হিমন্ত।
ঝাড়খণ্ডের মসনদে বসতে এখন থেকেই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন মোদী-শাহ-নাড্ডা-হিমন্ত। ইতিমধ্যেই হিমন্ত ঘোষণা করে দিয়েছেন, আদিবাসী অধ্যুষিত এই রাজ্যে এনডিএ সহযোগী AJSU এবং JDU একজোট হয়ে লড়বে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে হিমন্তের এহেন পদক্ষেপ কার্যত মাস্টারস্ট্রোক হতে পারে। শুধু তাই-ই নয়। লড়াইয়ের ময়দানে বিজেপির ক্ষমতা আরও পাকা হবে।
কখনও হিমন্ত বলেছেন, অনুপ্রবেশকারী পরিবারগুলোতে আগুন লাগবে। আর ঝাড়খণ্ড সন্তভূমি হবে। কখনও আবার হিমন্তের বক্তব্য, ঝাড়খণ্ডে আদিবাসী সংখ্যা কমছে, মুসলিমদের সংখ্যা বাড়ছে। যদিও সব মুসলিম অনুপ্রবেশকারী নন। কিন্তু আমাদের এখানে প্রতি ৫ বছরে মুসলিমদের সংখ্যা কীভাবে বাড়ছে, অবশ্যই বাইরে থেকে লোক আসছে। এটা তো সহজ হিসেব।
তবে হিমন্তের এবারের বক্তব্য উসকে দিল বাংলাদেশ বিতর্ককে। কী বলছেন হিমন্ত আসুন শুনে নেওয়া যাক, তিনি বলছেন—সাঁওতাল পরগনা বা ঝাড়খণ্ড ‘মিনি বাংলাদেশ’ তৈরি হতে চলেছে।
হিমন্তের বলা এই একটি লাইনেই লুকিয়ে রয়েছে ঝাড়খণ্ড নির্বাচনে বিজেপির রণনীতি।
তবে এই প্রথম নয়। নিজের রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যের বিষয়ে বারবারই নাক গলিয়ে ঝাঁঝাঁলো আক্রমণ করতে দেখা গিয়েছে হিমন্তকে। অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বারবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে সুই বিঁধিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী। বারবারই সেখানে বিজেপি সরকার গড়ার ও এনআরসি জারি করার বার্তা দিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
বাকযুদ্ধে পিছিয়ে নন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেএমএম-এর দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা হেমন্ত সোরেনও। হিমন্তের ‘মিনি বাংলাদেশ’ মন্তব্যের পাল্টা কড়া জবাব দিয়ে হেমন্ত বলেছেন, এঁরাই হিন্দু-মুসলিম সংঘাতে উস্কানি দেয়। তাঁরা ভাইদের মধ্যে সংঘাতে উস্কানি দেন, বাড়িতে ভাঙন ধরান। হেমন্ত পাল্টা বিজেপি নেতৃত্বকে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ নিয়ে খোঁচা দিয়ে বলেন, দাঙ্গার পর বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশের জন্য কে দায়ী? অন্যদিকে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে তুমুল ক্ষোভ উগরে দেন হেমন্ত সোরেন। তিনি সাফ জানান, এটা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে, বিএসএফ ও রাজ্য সরকারের হাতে। আমাদের কারোর থেকে কোনও প্রচারের দরকার নেই। ভারতবর্ষ, ভারতের মানুষের হাতে। বর্তমানে তাঁদের টাকা নেই কৃষকদের সমর্থনের জন্য। তবে তাঁদের কোটিপতি বন্ধুদের ঋণ মুকুবের ক্ষমতা তাঁদের রয়েছে।
ভোটমুখী ঝাড়খণ্ড। ৮১ আসনের ঝাড়খণ্ড বিধানসভা ভোটে ভোটগ্রহণ পর্ব চলবে ১৩ ও ২০ নভেম্বর। এখন দেখার ঝাড়খণ্ডে আধিপত্য কায়েমে কার শক্তির দাপট বেশি। ঝাড়খণ্ডের আসল নেতা কে। উত্তর বলবে ২৩ নভেম্বরের ভোট বাক্সের রিপোর্ট।