সহেলী দত্ত, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে লেবানন জুড়ে পাঁচ হাজার পেজার ও ওয়াকিটকিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিচ্ছিন্ন হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে ছন্নছাড়া, নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় রয়েছে লেবানন। নাসরুল্লার মৃত্যুতে কতটা প্রভাব পড়বে হিজবুল্লাহর উপর, ইরানের তরফেও কতটা সাহায্য পাবেন তারা এই সব একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে এখন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শীর্ষ নেতাদের হারানোর এসব ঘটনা হিজবুল্লাহর জন্য স্বল্প মেয়াদে বড় একটি আঘাত হলেও দীর্ঘ মেয়াদে সংগঠনটির উপর খুব একটা খারাপ প্রভাব পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ, এক নেতার জায়গায় অন্য নেতাকে বসিয়ে নেতৃত্বশূন্যতা দ্রুত পূরণ করবে হিজবুল্লাহ। এছাড়া সংগঠনটি প্রচণ্ড শক্তিশালী। হিজবুল্লাহ এখন টিকে থাকার জন্য পূর্ণ শক্তিতে আঘাত করার চেয়ে অস্থায়ী নেতৃত্বশূন্যতার দিকে বেশি মনোযোগী হবে। কৌশলগত ব্যবস্থাকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেবে। হিজবুল্লাহ নিঃশেষ হচ্ছে না এমনকি এখন ইরান যদি হিজবুল্লাহ রক্ষায় এগিয়ে না আসে, তবু কৌশলগতভাবে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করবে তারা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা হিজবুল্লাহ আরও একটি ভুল করেছে। যা তাকে ইজরায়েলের কাছে দুর্বল করে দিয়েছে। তাদের এই ভুলটা হল , তারা নিজেদের ইরানিদের প্রক্সি হিসেবে অনেক বেশি ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছে। অথচ এর আগে কিন্তু নিজেদের জনগণের স্বা্র্থে লেবাননের ভূখণ্ড রক্ষায় ইজরায়েলের সঙ্গে হওয়া লড়াইয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে হিজবুল্লাহ। ইজরায়েল হিজবুল্লাহর উপর এই বিধ্বংসী হামলাকে নিজেদের জয় বলে দাবি করছে। বিশেষজ্ঞদের মত ইজরায়েল নিজেদের মতো করেই এই আক্রমণ চালিয়ে যাবে। হাসান নাসরুল্লাকে হত্যার পর ইজরায়েল মনে করছে, এই ঘটনা তাদের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তারা হিজবুল্লাহর নেতৃত্বশূন্যতার সর্বোচ্চ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। যেসব ইজরায়েলি নেতানিয়াহুর বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁদের এই বিরোধীতার পেছনে কাজ করছে গাজায় নেতানিয়াহুর ব্যর্থতা। হামাসকে নির্মূল করতে না পারাও ইজরায়েলি জিম্মিদের দেশে ফেরাতে না পারার ঘটনা। কিন্তু তাঁরা ইসরায়েলের যুদ্ধ বিরোধী জনতা নন। অন্যদিকে ইজরায়েলকে তার আক্রমণ অব্যাহত রাখতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্রের জোগান প্রয়োজন হয়ে পড়তে পারে। হাসান নাসরুল্লার মৃত্যুর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইজরায়েলের সেনার হামলাকে ওয়াশিংটন সমর্থন করে। সেই সঙ্গে নাসরুল্লার হত্যাকাণ্ডকে ন্যায় বিচার বলেও আখ্যা দেন তিনি। তবে এই মুহূর্তে ইরানের অবস্থান কী হবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। ইরান কী ইজরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে নাকি এই যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলবে। সম্ভবত ইরান সর্বশক্তি নিয়ে আক্রমণের পথ বেছে নেবে না। তারা তাদের প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারে। এই বিষয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন,নাসরুল্লার হত্যাকাণ্ড ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধশক্তিকে আরও শক্তিশালী করবে। বিশ্ববাসী এটা ভুলবে না যে এই সন্ত্রাসী হামলার নির্দেশ নিউইয়র্ক থেকে এসেছে।
তবে তারা ইজরায়েলের হামলার জবাব দিতে প্রস্তুত বলে জানাল হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তাদের শীর্ষ নেতার মৃত্যু হলেও হাজার হাজার যোদ্ধা রয়েছেন, যারা প্রতিশোধ নিতে উন্মুখ। আছে সমৃদ্ধ অস্ত্রভাণ্ডারও। এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খামেইনির দাবি, শীঘ্রই হিজবুল্লাহর নেতা নাসরুল্লার জায়গা পূরণ করে লড়াই চালানো হবে। হিজবুল্লাহর শক্ত কাঠামোর বড় কোনও ক্ষতি করার মতো সামর্থ্য নেই ইজরায়েলের। তারা হিজবুল্লাহর সঙ্গে রয়েছে। সমর্থন দিয়ে যাবে। ইজরায়েল রুখতে পারবে না মধ্যপ্রাচ্যের সশস্ত্র যোদ্ধাদের। ২৯ সেপ্টেম্বর ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, ইজরায়েলে হামলার জন্য প্যালেস্তাইনের দুই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। নির্যাতিত প্যালেস্তাইনের জনগণের সঙ্গে সংহতি জানানো ও গাজা ও লেবাননে ইজরায়েলের হামলার প্রতিবাদে এটা করা হয়েছে। গাজা ও লেবাননের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ হলে তবেই তাদের অভিযান বন্ধ হবে বলে জানাল ইয়েমেন। ইজরায়েলের বিমান হামলায় লেবাননে হিজবুল্লাহর সর্বোচ্চ নেতা নাসারুল্লার মৃত্যুর একদিন পর এই হামলা চালায় ইয়েমেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণসভার বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দিয়ে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, যতক্ষণ না আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌছচ্ছি, আমরা থামব না। ওই অধিবেশনে লেবাননের বিদেশমন্ত্রী আবদুল্লা বাউহাবির রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে যুদ্ধবিরতির আর্জি জানান। উল্লেখ্য, পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফেরাতে বুধবারই ইজরায়েলকে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল আমেরিকা, ফ্রান্স সহ পশ্চিমের দেশগুলি।