দেশের কর ব্যবস্থায় এক অদ্ভুত বৈপরীত্য ধরা পড়েছে সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে। যে রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের গরীব মানুষই প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কর (GST) প্রদান করেন। উল্টোদিকে যারা আর্থিকভাবে সমাজের একেবারে উপরের শ্রেণীতে থাকেন তাঁরা মাত্র ৩-৪ শতাংশ জিএসটি প্রদান করেন। ‘অক্সফ্যাম’ (Oxfam) তাঁদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এই ভয়াবহ তথ্য তুলে ধরেছে।
সঞ্জু সুর নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- অক্সফ্যাম সংস্থা তাঁদের যে সাম্প্রতিক সার্ভে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যার টাইটেল ‘সারভাইভাল অব দ্য রিচেস্ট-দ্য ইন্ডিয়া স্টোরি (Survival of the richest-The India story)’। এই রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতবর্ষে আর্থিকভাবে গরীব মানুষদের অর্ধেক (যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ) দেশের মোট যে জিএসটি কালেকশন হয়, তার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ (৬৪.৩%) প্রদান করেন। অন্যদিকে যাঁরা দেশের সবচেয়ে বেশি সম্পদের মালিক, আর্থিকভাবে যাঁরা সমাজের সবচেয়ে উঁচু শ্রেণীতে রয়েছেন, তাঁরা জিএসটি প্রদান করেন মাত্র তিন থেকে চার শতাংশ। দেশের জনসংখ্যার নিরিখে এরা প্রায় দশ শতাংশ।
অক্সফ্যাম এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থ বর্ষে সারা দেশে জিএসটি থেকে প্রায় ১৪.৭ লক্ষ কোটি টাকা কর বাবদ আয় হয়। ২০২২-২৩ এ যার পরিমান প্রায় ১৮ লক্ষ কোটি টাকা। রিপোর্ট অনুযায়ী আয়ের দিক থেকে দেশের একদম নিচের দিকে থাকা মানুষ অপ্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে সরকারকে সবচেয়ে বেশি কর দেন। মধ্যম আয়ের মানুষ, যারা দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ, তাঁরা এই ধরনের কর প্রদান করেন মোট জিএসটি-র প্রায় ১০ শতাংশ।
অক্সফ্যামের রিপোর্টে আরও প্রকাশ দেশের মোট সম্পদের ৪০.৬ শতাংশের মালিক হলেন দেশের প্রথম সারির মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। আর ওই যে ৫০ শতাংশ মানুষ যারা মূলতঃ গরীব শ্রেণীভুক্ত, তাঁরা ভোগ করেন দেশের মোট সম্পদের মাত্র ৩ শতাংশ।
যে দেশে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গরীব (প্রায় ২৩ কোটি) মানুষের বাস, সেখানে ২০২০ সালে দেশের ১০২ জন কোটিপতির সংখ্যা ২০২২ এ বেড়ে হয়েছে ১৬৬ জন। অক্সফ্যামের রিপোর্টে অবশ্য এটাও বলা হয়েছে যে এই মুহূর্তে ভারতবর্ষ পৃথিবীর অন্যতম দ্রুতগতির ইকোনমি (fastest growing economy) বৃদ্ধির পথে থাকলেও, দেশে ধনী ও গরীবের মধ্যকার অসাম্যও খুবই প্রকট। রিপোর্ট অনুযায়ী এই বৈষম্য বেড়েছে শেষ তিন দশকে। এই সময়কালে বড়লোক আরও বিত্তশালী হয়েছে আর গরীব আরও গরীব হয়েছে। বিশেষ করে কোভিডের পর এই বৈষম্য বেড়েছে দ্রুত গতিতে।