সহেলী দত্ত, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ খাবার সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নামিবিয়া। অনাবৃষ্টির জেরে খরার মুখে আফ্রিকা দক্ষিণ অঞ্চল নামিবিয়া। জলের অভাবে চাষাবাদ না হওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্যসঙ্কট। এই পরিস্থিতিতে বন্যপ্রাণী মেরে খাদ্যসঙ্কট মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের সরকার। শস্য ভান্ডারও শেষের মুখে। মানুষ তো বটেই প্রাীদের খাবার জোগাতেও অক্ষম নামিবিয়া সরকার। দেশের মানুষের মুখে খাবার জোগাতে অবশেষে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের সরকার। চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুবেলা দু মুঠো খাবার জোগাতে পারছে না আফ্রিকার নামিবিয়া নামক দেশের মানুষেরা। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১.৪ মিলিয়ন। যার প্রায় অর্ধেক খাদ্য সংকটের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। নামিবিয়া সরকারের বন ও পরিবেশ দফতরের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়েছে, অনাহারক্লিষ্ট, ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য প্রোটিন খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হাতি, জলহস্তী, বুনো মহিষ, জেব্রা ও বিভিন্ন প্রজাতির অ্যান্টিলোপ –সহ ৭২৩টি বন্যপ্রাণী শিকার করা হবে। এ জন্য পেশাদার শিকারি ও গাইডদের সরকার পক্ষ থেকে নিয়োগ করা হয়েছে। মাংসের জন্য ৩০টি জলহস্তী, ৬০টি মহিষ যাকে কেপ বাফেলো বলা হয়ে থাকে। ৫০টি ইম্পালা, ১০০টি ব্লু ওয়াইল্ডবিস্ট, ৩০০টি জেব্রা, ৮৩টি হাতি এবং ১০০টি ইংল্যান্ড মারার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে শিকারপর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রসঙ্গত নামিবিয়ার খরা পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেখানকার শিশুদের অধিকাংশই চরম অপুষ্টির শিকার বলে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে জানান হয়েছে। চলতি এক দশকে এই নিয়ে তৃতীয় বার খরা পরিস্থিতির মুখোমুখি হল নামিবিয়া।
বিজ্ঞপ্তিতে এও বলা হয়েছে এখনও পর্যন্ত মাঙ্গেত্তিতে বিভিন্ন প্রজাতির ১৫৭টি প্রাণী শিকার করা হয়েছে। হত্যা করা প্রাণী থেকে মোট ৫৬ হাজার ৮৭৫ কেজি মাংস পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ক্ষুধার্ত দেশবাসীর মধ্যে। বাকি প্রাণীগুলিকেও খুব তাড়াতাড়ি শিকার করে তাদের মাংস দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নামিবিয়ার পরিবেশ মন্ত্রক।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই দুর্দশার মূল কারণ হল এল নিনো। দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল থেকে উষ্ণ সমুদ্রের জল পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে এশিয়া-অস্ট্রেলিয়া উপকূলের কাছে কেন্দ্রীভূত হয়। কিন্তু এল নিনোর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের যে অংশ ঠাণ্ডা থাকার কথা, তা ক্রমাগত উষ্ণ হতে শুরু করে। সমুদ্রের অতিরিক্ত তাপ সমুদ্রপৃষ্ঠের বাতাসে নির্ত হতে শুরু করে। এই এল নিনোর প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার নামিবিয়ার প্রায় ৬ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষের উপর। দেশের অর্থনীতিও ভেঙে পড়েছে। প্রসঙ্গত এল নিনোর প্রভাব শুধু নামিবিয়ায় নয় জিম্বাবোয়ে, জাম্বিয়া এবং মালাউই সহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত নামিবিয়া একাধিক বার খরার কবলে পড়লেও এর আগে আফ্রিকার এই দেশ এত ভয়াবহ খরার মুখোমুখি হতে পারেনি।