নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক: সব জল্পনার অবসান ঘাটিয়ে ফের একবার ইসরাইলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়লো ইরান । মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলেরকে লক্ষ্য করে প্রায় ১৮০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইজরায়েলের তেল আভিভে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে দেশটি। যার জেরে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষেপনাস্ত্র ছোঁড়ার পর ইসরায়েলের জেরুজালেম ও জর্ডান রিভার থেকে বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে।এতে আহত হয়েছেন কয়েকজন হামলার সময় ইসরায়েল জুড়ে বেজে ওঠে সাইরান। লোকজনকে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেবার কথা জানানো হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশটির আকাশসীমা। পাল্টা ইরানকে যোগ্য জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে জানালেন, ‘ইরানকে এই ভুলের ফল ভুগতে হবে।’ তবে ইরানের পক্ষ থেকে নতুন করে হামলা হবে না বলে জানানও হয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাবাহিনীর পক্ষ থেকে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের রাজধানী বেইরুটে হাসান নারারল্লাহ ও আইআরজিসি কম্যান্ডর আব্বাস নিলফোরোশানের মৃত্যু হয় ইজরায়েলের হামলায়। তখনই ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, বদলা নেবে। অন্যদিকে গত জুলাইয়ে হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়েকে তেহরানে হত্যা করা হয়। যদিও ইসমাইলের মৃত্যুর তাদের হামলায় হয়নি বলেই দাবি ইজরায়েলের।
গতকাল রাতে যে হামলা হয়েছে তাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে ইসরায়েলের বড় অংশ বলে খরব। তবে ইরানের এই ভয়াবহ হামলায় কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইসরায়েলের, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে আর হামলা হবে না বলেও ইরান আশ্বস্ত করলেও৷ ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে ইরান। ইরানের পক্ষ থেকে জানানও হয়েছে এই হামলার পাল্টা ইসরায়েল দিলে তেহেরানোর জবাব আরও মারাত্মক হবে।
এই হামলার আগে এপ্রিল মাসে ইসরায়েলের উপর হামলা করে ইরান। তবে এপ্রিলে যে হামলা চলেছিল, তার চেয়েও ভয়াবহ ছিল এই হামলা। এপ্রিল মাসে প্রায় ১১০টি মিসাইল অ্যাটাক করেছিল ইরান। এবার তার সংখ্যা ১৮০টি। যা বড় যুদ্ধের সংকেত বলেও মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে পাওয়া ফুটেজ থেকে জানা গেছে মঙ্গলবার ইসরায়েলের রাজধানী তেল আভিভেে রাত পৌনে ৮টা নাগাদ মিসাইলের পর মিসাইল হামলা শুরু করে ইরান।বেশকিছু মিসাইল ইসরায়েল সেনা আকাশেই নিষ্ক্রিয় করে দেয়। তবে জেরুজালেমে বেশ কিছু সেনাঘাঁটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এই হামলায় মৃত্যুও ঘটেছে অনেকের। তবে কত জনের মৃত্যু হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যাননি।
ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি হচ্ছিল দেশটির। যা এক সময় রূপ নেয় চরম শত্রুতার।পরবর্তীকালে নানা সময়ে ইরানে চোরাপথে বা প্রকাশ্যে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পরে ইরানের পারমানবিক কাজে বাধা দিতে বহুবার বিভিন্ন অপকর্ম করেছে ইসরায়েল। কারণ ইসরায়েল বিশ্বাস করে ইরান যদি কখনও পরমানুর শক্তিধর দেশ হয়ে ওঠে তবে তা হবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। ফলে ইসরায়েল কখনও ইরানে গুপ্তহত্যা, সাইবার আক্রমণ ও ড্রোন হামলার মত কাজগুলো চালিয়ে এসেছে। ইরান কেন ইসরায়েলের চরম শত্রুতে পরিণত হল সে সম্পর্কে একটু অতীতের দিকে নজর ফেরানো যাক।
১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্ক বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ । কিন্তু এই সম্পর্ক খারাপ হয় যখন আয়াতুল্লাহ কথিত ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে তেহরানের ক্ষমতা দখল করে।এমনকি শুরুর দিকে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের তৈরির বিরোধিতা করলেও মিশরের পর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া দ্বিতীয় মুসলিম দেশও ছিল ইরান।কিন্তু ১৯৭৯ সালে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে যায়। রুহুল্লাহ খোমেনি বিপ্লবের মাধ্যমে শাহকে উৎখাত করে ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র চাপিয়ে দেয়।এই নতুন সরকারের পরিচয়ের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইসরায়েলের ‘সাম্রাজ্যবাদ’কে প্রত্যাখ্যান করা।এরপর থেকেই ধীরে ধীরে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে শত্রুতা বাড়তে শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে ইসরায়েল ইরানকে তার অস্তিত্বের জন্য অন্যতম প্রধান হুমকি হিসেবে দেখতে শুরু করে এবং দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যার পরিনতি এই মল্লযুদ্ধ।