রতন টাটা। বাঙালীর মননে থেকে যাওয়া এমন এক নাম যা আজ ষোলো বছর পরেও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। ২০০৮ সালে রাজ্য ছেড়েছিলো তাঁর ‘ন্যানো’ গাড়ি। ২০২৪ সালে তিনি নিজেই পরপারে পাড়ি দিলেন। শেষ হয়ে গেল ভারতীয় শিল্প জগতের এক অন্যতম প্রাণপুরুষের অধ্যায়।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- ২০০৬ সালে হুগলীর সিঙ্গুরে টাটা কোম্পানির গাড়ির কারখানা তৈরির সিদ্ধান্ত জানায় রাজ্য সরকার। শুরু হয় অনিচ্ছুক কৃষকদের আন্দোলন। সেই আন্দোলনে যোগ দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শেষে ২০০৮ সালে এমনই এক দুর্গাপুজোর চতুর্থীতে সাধের ‘ন্যানো’ কারখানা বন্ধের ঘোষণা করেন টাটা কর্ণধার রতন টাটা। প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলেন “ব্যাড এম ছেড়ে গুড এম কে বেছে নিয়েছেন।” ব্যাড এম এবং গুড এম বলতে তিনি যে আসলে সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদির কথা বলেছিলেন সেটা বোঝা যায় যখন তিনি তাঁর স্বপ্নের ন্যানো কারখানার পরবর্তী ডেস্টিনেশন হিসাবে গুজরাতের ‘সানন্দ’- এর নাম জানান। সেই সময় তিনি কিছুটা খেদ ও দুঃখের সঙ্গে বলেছিলেন, “কপালে বন্দুক ঠেকালেও যাবো না, কিন্তু উনি তো ট্রিগারটাই টেনে দিলেন।” সেদিনই শেষ হয়ে গিয়েছিলো বাংলায় ভারি শিল্পের ভবিষ্যৎ।
দীর্ঘদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে টাটা গোষ্ঠীর, বিশেষ করে রতন টাটার সম্পর্ক একেবারেই তলানিতে ছিলো যা ২০১১ সালে এরাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরেও বেশকিছু বছর বজায় ছিলো। তবে বরফ গলতে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে শিল্পায়নে উদ্যোগী হয়ে ওঠার পরেই। একদিকে যেমন টাটা গোষ্ঠীও জড়তা কাটিয়ে সরকারি বিজনেস সামিটে অংশ নিতে শুরু করে, ঠিক তেমনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আন্তরিকতার সঙ্গে টাটা কে রাজ্যে নতুন করে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে থাকেন।
এদিন সেই রতন টাটার মৃত্যুর পর এক্স হ্যান্ডেলে পোষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “টাটা সন্সের এমেরিটাস চেয়ারম্যান রতন টাটার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত।
টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন ভারতীয় শিল্পের একজন পথিকৃৎ নেতা এবং একজন পরোপকারী জন-উৎসাহী মানুষ। তাঁর মৃত্যু ভারতীয় শিল্প জগৎ ও সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর পরিবারের সকল সদস্য ও সহকর্মীদের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই।”
‘রতন টাটা’, ২০০৬ সালের আগে যে নামটার (টাটা-র প্রোডাক্ট নয় কিন্তু) সঙ্গে খুব বেশি হলে ১০/১৫ শতাংশ বাঙালির পরিচয় ছিলো, সিঙ্গুরের ন্যানো কারখানাকে কেন্দ্র করে সেই বাংলারই প্রায় ৭০/৮০ শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলো তাঁর নাম। সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ির কারখানা হোক বা না হোক, বাঙালীর মনে একটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। ষষ্ঠীর রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফের যেন আর একবার ন্যানো গাড়ি জেগে উঠলো আপামর বাঙালির মনে, ভেসে উঠলো রতন টাটার মুখ। হয়তো বা শেষ বারের মতো।