সহেলী দত্ত, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র হামলার ঘটনায় ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে চবিতে। অভিযোগ ২১ অক্টোবর ভোরে ছাত্রলীগের কর্মীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলগেট এলাকায় একটি দোকানে হামলা চালায়। এরপর আশেপাশের বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুর চালায়। শিক্ষার্থীদের উপর ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তারা। ক্যাম্পাসে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিরো পয়েন্টে মিলিত হন। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। আহত হন ৪ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, স্থানীয় দুই ব্যবসায়ীর দ্বন্দ্বে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ককটেল বিস্ফোরণ করেন। যার জেরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে রেলক্রসিংয়ের দিকে এগিয়ে গেলে আবারও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গোটা ঘটনায় চলাকালীন পুলিশের সহযোগিতা তেমন পাওয়া যায়নি। যদিও পুলিশের তরফে জানান হয়, অসহযোগিতার যে অভিযোগ করেছে সেটা সঠিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক করার জন্য সবরকম সহযোগিতা করা হয়েছে। যুবলীগ নেতা হানিফ ও তার ছোটভাই ছাত্রলীগ নেতা মো. ইকবাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের জায়গায় অবৈধভাবে দখল করে সব দোকানের ভাড়া নেন। পাশাপাশি, ক্যাম্পাস ও আশেপাশের এলাকায় ডিসের লাইন এবং ব্রডব্যান্ডের ব্যবসা করেন বলে জানা গেছে। এদের নেতৃত্বেই হামলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই হামলার প্রতিবাদ এবং ছাত্রলীগ নিষিদ্ধকরণের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মশাল মিছিল শুরু হয়। পরে শাহবাগমুখী রাস্তা ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, মধুর ক্যান্টিন শ্যাডো, সূর্য সেন হল, উপাচার্যের বাসভবন ঘুরে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয় মিছিল।
মিছিলে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধকরণের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর পদত্যাগ নিয়েও কটাক্ষ করেন আন্দোলনকারীরা। কারণ শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আড়াই মাসের মাথায় রাষ্টপতি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে কোনও দালিলিক প্রমাণ নেই। রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্য প্রকাশের পর অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের মধ্যেও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এর পরিপ্রক্ষিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্ত পাননি. এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। সাহাবুদ্দিন যদি নিজের বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখা হবে। এই বিষয়ে ছাত্রনেতারা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে। এখানে পদত্যাগের কোন ভূমিকা নেই। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক জানান, রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচ করার ক্ষমতা সংসদের। এখন সংসদ নেই। কিন্তু এখন অনেক কিছু আইনের বাইরে হচ্ছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রপতির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আড়াই মাস পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র নেই বলে রাষ্ট্রপতি যে বক্তব্য দেন, সেটিকে স্ববিরোধী বক্তব্য বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র না থাকায় রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন যে বক্তব্য দিয়েছেন তাঁর পদে থাকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি পদে থাকবেন কিনা সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সব মিলিয়ে ফের নড়বড়ে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। এবারের ছাত্র আন্দোলনের জেরে কী হয় তা সময়ই বলবে।