পৌষালী উকিল, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমির বর্তমানে ৩ টি দিক। যার ফলে শাঁখের করাতের মতো অবস্থা হয়েছে সেখানকার অন্তর্বর্তী সরকারের।
একদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। সংস্কার ও ঐক্যমতের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশের নির্বাচন হবে।
সেই মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলি আওয়ামী লীগ সহ যে কোনও দলকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানো হলে দ্বিতীয় গণ অভ্যুথ্থান হবে বলে হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২ নেতা।এই পরিস্থিতিতে হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান সে দেশের অন্তবর্তী সরকার। রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না-করা নিয়ে কিছুটা উভয়সংকটে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
জুলাই থেকে বাংলাদেশে ঘটনার ঘনঘটা। ৫ অগাস্ট দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুস। তারপর থেকেই দফায় দফায় অশান্ত হচ্ছে পদ্মাপাড়। নির্বাচনমুখী বাংলাদেশ। দিনক্ষণ ঘোষণা না হলেও, নির্বাচন ঘিরে ভিন্ন দলের ভিন্ন মত।জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা আওয়ামী লীগকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার বিষয়ে অনড়। অন্যদিকে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো চাচ্ছে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হোক। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং দলটিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার দাবিতে সোচ্চার।
মাথার ছাদ হাসিনাকে কাছে না পেয়ে বাংলাদেশে ক্রমশই কোনঠাসা হচ্ছে তাঁর দল আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যেই বিরোধীদের কোপে পড়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। বাদের তালিকায় নাম উঠেছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজরিত যেকোনও জিনিস। আওয়ামী লীগকে আবার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্রেরা।
তবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা, তা আলোচনার আবহে একটি অডিয়ো প্রকাশ করল খোদ সেই দলটিই। যদিও সেই অডিওর সত্যতা যাচাই করেনি আর প্লাস নিউজ। অডিয়োটি ডেনমার্কের আওয়ামী লীগের টেলি-কনফারেন্স বলে ফেসবুকে দাবি করা হয়েছে। সেখানে নেত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ছাত্র আন্দোলন চলার সময় তিনি কাউকে গুলি করার নির্দেশ দেননি। ওই আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাঁর আমলে শুরু হওয়া বিচারবিভাগীয় তদন্ত বন্ধ করা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে অডিয়োতে। অডিয়োটি ভাইরাল হতেই চাঞ্চল্য পদ্মাপাড়ে।
আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে দ্বিতীয় গণ অভ্যুথ্থানের আগুন উসকে দিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। সম্প্রতি ভারতের এক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস বলেন, বাংলাদেশের ভোটে আওয়ামী লীগের লড়াইতে বাধা দেওয়া হবে না। প্রথমেই ইউনুসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ কি ঈআগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবে। জবাবে ইউনুস বলেন, এটা ইতিমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। বিএনপি এটা করেছে। তারা বলেছে, সব রাজনৈতিক দল অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। আমরা দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের মতামতকে উপেক্ষা করব না। ইউনুসের এইসব মন্তব্য ঘিরেই সরব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২ নেতা।আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলে ইতিহাস গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করবে, তোপ হাসনাত আবদুল্লাহর। গণহত্যার বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে কোনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেব না। প্রয়োজনে দ্বিতীয় অভ্যুথ্থান হবে। বললেন, সারজিস আলম।
তবে আপাতত বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করছে না মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সে দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইন সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব থেকে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ সংক্রান্ত বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে।ইউনুস সরকার এসেই প্রথমে আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার জেলমুক্তির ব্যবস্থা করেন। এতদিন যে জিয়া ব্যাকফুটে থেকেই লড়ছিলেন তাঁর এবার সামনে আসার পালা। নির্বাচন আবহে এবার ময়দানে নেমে ফ্রন্টলাইনে আসার পালা। ২০১৮ সালের পর ফের প্রকাশ্যে আসছেন জিয়া। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে গুলশানের বাসভবন থেকে সেনাকুঞ্জে যান বিএনপির চেয়ারপার্সন। ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শেষবার সিলেট সফরে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ৬ বছর ৯ মাসেরও বেশি সময় পর তাঁর কর্মসূচি, যেখানে তিনি প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করলেন। বিএনপির চেয়ারপার্সনের একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী এবি আব্দুস সাত্তার জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।সব মিলিয়ে নির্বাচন শিকেয় উঠলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্দরে। আওয়ামী লীগকে আপাতত নিষিদ্ধ না করলেও, এখনও দ্বিধা দ্বন্দ্বেই জর্জরিত দলটি। তবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। এমন সম্ভাবনা ক্রমশই দৃঢ় হচ্ছে।