রিয়া দাস, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অ্যাকশন-রোম্যান্স-থ্রিলারে দেওয়া ডায়লগে যাঁরা দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন নিরন্তর, আজ তাঁরাই থ্রিলড অ্যান্ড থ্রেটে়ড। পর্দার ভয় বাস্তবে। নায়ককে আক্রমণ খলনায়কের। এ ছবি বছরের পর বছর ধরে দেখে আসছেন দর্শকরা। সেই আতঙ্ক আপেক্ষিক এবং বিনোদনের ক্ষেত্রেই উপভোগ্য। কিন্তু সেটা ছবি ছেড়ে যখন বাস্তব জীবনে ঘটে, তখন শঙ্কা জাগে অভিনেতা ও তাঁদের ফ্যানেদের মনে। এমন ধরনের ঘটনাই বর্তমানে রাতের ঘুম কাড়ছে একের পর এক অভিনেতার। যদিও বাদ পড়েননি রাজনীতিক ব্যক্তিত্বরাও। হঠাৎ কেন এ প্রসঙ্গের উথ্থাপন, আসুন জেনে নেওয়া যাক।
আতঙ্কের নাম বিষ্ণোই গ্যাং
আতঙ্কে সিঁটিয়ে বাদশা থেকে ভাইজান, বাবা সিদ্দিকি থেকে এমএলএ ফাটাকেষ্ট। কার ভয়ে? আতঙ্কের নাম লরেন্স বিষ্ণোই। শাহরুখ-সলমনের পর এবার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হল অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে। বলিউড অভিনেতাদের প্রাণনাশের হুমকি আসছে ক্রমাগত। গত ২ মাসে একের পর এক হুমকি পেয়েছেন সলমন খান। গত সপ্তাহেই শাহরুখ খানকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, এ সব হুমকি দিচ্ছে কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই। এবার পাকিস্তান থেকে শাহজাদ ভাট্টি নামের এক গ্যাংস্টারের তরফে ভিডিয়োবার্তায় হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই শাহজাদ ভাট্টি আবার ভারতীয় গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেই সূত্রের খবর।
মিঠুনকে কেন হুমকি ?
এবারে দাবি করা হয়েছে, সম্প্রতি দাদাসাহেব ফালকে সম্মানপ্রাপ্ত অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর মন্তব্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে। তারই বদলা নিতে এই প্রাণনাশের হুমকি। ভিডিয়োবার্তায় অভিনেতাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। বেঁধে দেওয়া হয়েছে ডেডলাইন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে মিঠুনকে। না হলেই খুন হবেন তিনি।
কি বলেছিলেন মিঠুন ?
গত ২৭ অক্টোবর বিজেপির এক জনসভায় অমিত শাহের উপস্থিতিতে ভাষণ দিচ্ছিলেন মিঠুন। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার বিধায়ক হুমায়ূন কবিরের এক মন্তব্য তুলে ধরেন তিনি। যেখানে ওই নেতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘’এখানে আমরা ৭০ শতাংশ মুসলিম। হিন্দুদের কেটে ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেব।‘ এই মন্তব্যেরই পাল্টা মিঠুন চক্রবর্তী বলেন, ‘’এখানকার এক নেতা বলেছিলেন, হিন্দুদের কেটে ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেব। ভেবেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে কিছু বলবেন, বলেননি। কিন্তু আমি বলছি, তোমাকে তোমার মাটিতেই পুঁতে দেব।‘ মিঠুনের সেই মন্তব্য তুলে ধরেই এবার ভিডিও বার্তায় পাকিস্তানের গ্যাংস্টারের থেকে প্রাণনাশের হুমকি আসে।
বিষ্ণোই গ্যাংয়ের বিস্তার
শাহজাদ ভাট্টি ভারতীয় গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। যিনি সলমন খানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য খবরের শিরোনামে ছিলেন। বিষ্ণোই সলমনকে হুমকি দিয়েছেন এবং কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সম্প্রতি সলমনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই খুনের দায় স্বীকার করে বিষ্ণোই গ্যাং।
এবার পাকিস্তানি গ্যাংস্টার শাহজাদ ভাট্টির হুমকিবার্তা প্রকাশ্যে আসার পর স্বাভাবিক ভাবেই শোরগোল শুরু হয়েছে। বিষ্ণোই গ্যাংয়ের নামে একে পর এক খুনের হুমকি পেয়েছেন সলমন। একইভাবে শাহরুখ খানও খুনের হুমকি পান। সেই তালিকায় এবার যোগ হল অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর নাম। নাম যোগ হল আরও এক গ্যাংস্টারের নামও। বিষ্ণোই গ্যাংয়ের জাল দেশ ছেড়ে বিদেশেও যে ছড়িয়ে গিয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সবরমতী জেল থেকে শাহজাদের সঙ্গে ভিডিয়ো কল কথা বলে লরেন্স। সেই ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রশ্ন উঠছে, বারবার কেন অভিনেতা কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের টার্গেট করা হচ্ছে। জেলে বসেই কোথা থেকে এত সাহস পাচ্ছে এই কুখ্যাত গ্যাংস্টার। প্রশ্ন উঠছে এতবার শিরোনামে উঠে আসা একজন গ্যাংস্টার কীভাবে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে নিজের কুকীর্তির লিস্ট বাড়িয়ে চলেছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন এটাই, যে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের উদ্দেশ্য কি। কোথায় গিয়ে থামবে হুমকি পর্ব। প্রথমে বাবা সিদ্দিকি, সলমন খান, শাহরুখ খান তারপর মিঠুন চক্রবর্তী। এরপর বিষ্ণোই গ্যাংয়ের হুমকির লিস্টে আর কারা কারাই বা আছেন। বিষ্ণোই প্রশ্নের ধাঁধাঁয় বিভ্রান্ত জনগণ।