মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামে নোঙর করল পাকিস্তানি জাহাজ। বুধবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের হাই কমিশন। এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক বলেও অভিহিত করা হচ্ছে। কারণ, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের পর এই প্রথম কোনও পণ্যবাহী জাহাজ পাকিস্তানের করাচি থেকে বাংলাদেশে এল। বুধবার জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে রওনা হয় জাহাজটি। করাচি থেকে সরাসরি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রথমবার কোনও জাহাজ নোঙর করা হল। এই জাহাজের নাম উয়ান জিয়াং ফা ঝান। করাচি থেকে আসা এই জাহাজে ৩৭০টি কন্টেনারে করে পণ্য ভরা ছিল। নোঙর করার সময়, জাহাজে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানি হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। তিনি জানান, পাকিস্তান-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এটি প্রধান পদক্ষেপ। এই নতুন রুটটি সাপ্লাই চেইনকে স্ট্রিমলাইন করবে, কমিয়ে দেবে ট্রানজিটের সময়। উভয় দেশের জন্য নতুন ব্যবসার সুযোগ করে দেবে বলেও মন্তব্য করলেন পাক হাইকমিশনার।
মাস তিনেক আগে বাংলাদেশজুড়ে চরম অশান্তি শুরু হয়েছিল। অশান্তির জেরে দেশ ছাড়ত বাধ্য হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর বাংলাদেশে দায়িত্বে আসে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের জাহাজ নোঙর করার ঘটনা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। মহম্মদ ইউনুস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে প্রথম থেকেই চর্চা শুরু হয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে এই জাহাজের প্রত্যাবর্তন তারই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। এরইমধ্যে ক্রমশ সুস্পষ্ট হচ্ছে মহম্মদ ইউনুসের পাকপ্রেম। তবে কি বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলা হচ্ছে? বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, এমনটা হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ বলে মানতে নারাজ মহম্মদ ইউনুস। মুজিবুর রহমানের ওই স্বীকৃতি কেড়ে নিতে বাংলাদেশ হাইকোর্টে সওয়ালও করেছেন বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান। এর পরেই বাংলাদেশের চট্টগ্রামে নোঙর করল পাক জাহাজ। করাচি থেকে সারাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসায়, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ আরও দৃঢ় হবে বলে পাকিস্তান টুডেকে জানানো হয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের তরফে।
তবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের এই উষ্ণ সম্পর্কের জেরে উদ্বেগে রয়েছে ভারত। কারণ পাক-বাংলাদেশের এই সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল লাগোয়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ভারত। ভারতীয় এই বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, এই জলপথ ব্যবহার করে চোরাচালানের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই পরিচালিত একটি অস্ত্র চালান ধরা পড়েছিল। যা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অবৈধ অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের আমলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের রসায়ন যে পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে, তা ক্রমেই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে ভারতের পক্ষে।