মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ১৯৭২ সালে মুজিবুর রহমানের আমলে যে সংবিধানে তৈরি হয়েছিল, তাতে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার মতো শব্দগুলি ছিল। ওই শব্দগুলি বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ নাগরিক মুসলিম। তাই বাংলাদেশের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। অ্যাটর্নি জেনারেলের এই মন্তব্যের পরই এবার সংবিধান বদলের দাবি উঠল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হয় একটি সম্মেলন। সেখানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদিন জানান, আমরা চাই এই সরকার মানুষের ভাষা বুঝুক। জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়াটাই লক্ষ্য রাখতে হবে নতুন সরকারকে। এই জন্য একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। শেখ হাসিনা এত পাপ করেছেন, তারও বিচার হওয়া উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন জয়নুল আবেদিন। সেমিনারে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ১৯৭২ সালে যে সংবিধান তৈরি হয়েছিল, তা না আইনের বই না সংবিধান। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, আগের সংবিধান পুঁজিবাদী সংবিধান। নতুন সংবিধানের ভাষা হতে হবে সর্বসাধারণের ব্যবহৃত ভাষায়।
এরইমধ্যে আবার নতুন বাংলাদেশের বার্তা শোনা গেল বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের মুখে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বাক্স্বাধীনতার দেশ। রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সূচনা করা হল। শনিবার বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৪ সম্মেলনের উদ্বোধনের সময় এই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ মন্তব্য শোনা যায় মহম্মদ ইউনুসের মুখে। তিনি বলেন, মাত্র ১০০ দিন আগে একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছিলাম। ছাত্র-জনতার এই বিপ্লব গত ১৬ বছর ধরে শাসন করা এক ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করেছে। এই জন্য এক হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী, শ্রমিক এবং সাধারণ প্রতিবাদীর প্রাণ অকালে ঝড়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ২০ হাজার ছাত্র-জনতা। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা যাক। যাঁরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, যারা চিরদিনের জন্য তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, দৃষ্টিশক্তি এবং শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন এবং যারা এখনো জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদেরকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হোক এই সম্মেলনের মাধ্যমে। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বাক্স্বাধীনতার।
সম্মেলনে আসা বিদেশি অতিথিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস বলেন, ঢাকার রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে, রাস্তাগুলোর দেওয়ালে তরুণদের আবেগ এবং আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আঁকা রঙিন ছবিগুলো দেখে মুগ্ধ হবেন। তরুণদের সৃজনশীলতা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। কোনো ডিজাইনার ছিল না, কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ছিল না। এর জন্য কোনও তহবিল আসেনি।
মহম্মদ ইউনুস আরও বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবিচার, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশ বারবার দেখিয়েছে কীভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। এবারেও তার অন্যথা হবে না। ঢাকায় আয়োজিত বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৪ সম্মেলনে এমনই বার্তা দিলেন মহম্মদ ইউনুস। সবমিলিয়ে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর, ইউনুসের তত্ত্বাবধানে মুজিবুর রহমানের আদর্শ থেকে ক্রমশ সরে এসেছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে মহম্মদ ইউনুসের নতুন বাংলাদেশ কোন পথে, কীভাবে আত্মপ্রকাশ করে, সেদিকেই তাকিয়ে আন্তর্জাতিক মহল।