মাম্পী রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ গুগল ক্রোমের তুমুল জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধে আইনি পথে হাঁটছে মার্কিন বিচার বিভাগ। তাদের দাবি, ইন্টারনেট সার্চ মার্কেট ও তার সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেই কার্যত একচেটিয়া ব্যবসা করছে গুগল ক্রোম। তাই ক্রোমের নিয়ন্ত্রক অ্যালফাবেটের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করছে আমেরিকার বিচার বিভাগ।
অক্টোবরে গুগলের বিরুদ্ধে আদালতে নথিপত্র জমা দিয়েছে আমেরিকার বিচার বিভাগ। গুগলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ভাবনাও রয়েছে তাদের। গুগলকে ক্রোম বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়ার ভাবনাও রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনই গুগলের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছিল আমেরিকার বিচারবিভাগ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্লোবাল সার্চ ইঞ্জিনের বাজারে ৯০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ক্রোমের দখলে। মার্কিন বাজারের ৬১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে ক্রোম। অক্টোবর পর্যন্ত করা এই সমীক্ষার ভিত্তিতেই ক্রোমের বিরুদ্ধে একচেটিয়া আধিপত্যের অভিযোগ এনেছে মার্কিন বিচারবিভাগ। অগাস্টে মার্কিন আদালতের বিচারক অমিত মেহতা জানিয়েছিলেন, অনলাইন সার্চের ক্ষেত্রে ‘মনোপলি’ রয়েছে গুগল ক্রোমের। এই কারণেই গুগলের বিরুদ্ধে শাস্তির ভাবনা রয়েছে আদালতের। যদিও প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করেছে গুগল। তাদের দাবি, তারা একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রাখে না। আদালত ক্রোম বিক্রির নির্দেশ দিলে মোবাইলের দাম বাড়বে। বিষয়টি নিয়ে পাল্টা আদালতে আবেদন করতে পারে গুগল।
মার্কিন বিচারবিভাগের প্রস্তাবিত সমাধান নিয়ে ২০২৪ সালের এপ্রিলে দু সপ্তাহ ধরে শুনানি হয়েছিল। ২০২৫ সালের অগাস্টে এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।
গুগলের ভবিষ্যৎ কী ?
সিরাকুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেথ ইগানের মতে, আদালত বিচার বিভাগের পক্ষে রায় দিলে তাতে গুগলের ব্যবসার মডেলে বড়সড় পরিবর্তন ঘটবে। ক্রোম বিক্রি করে দিলে গুগলের একটি বড় তথ্যভান্ডার হাতছাড়া হবে। এই তথ্য ব্যবহার করে গুগল তার অ্যালগরিদম উন্নত করে এবং ম্যাপসের মতো পরিষেবা দেয়। ২০০৮ সালে ক্রোম ব্রাউজার বাজারে আসার পর থেকে অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হাতে চলে এসেছে এটি। এবার সেই দৌড়ে নাম লিখিয়েছে মাইক্রোসফট এজ এবং অ্যাপলের সাফারি ব্রাউজার। বেথ ইগানের মতে, ক্রোম বিক্রি করতে বাধ্য হলেও গুগল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
ক্রোমের বাজারমূল্য ?
ব্লুমবার্গের একটি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিক্রি করা হলেও গুগলের দাম হতে পারে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। কিন্তু যেহেতু গুগল ক্রোমকে আগে কখনও বিক্রি করা হয়নি, সেক্ষেত্রে এর সঠিক দাম নির্ধারণ করাটা সহজ নয়।
২০১৬ সালে একটি চিনা কোম্পানি একটি ইন্টারনেট ব্রাউজার কিনেছিল। নরওয়ের অপেরা সফটওয়্যার এ-এস-এর কাছ থেকে কেনা ওই ব্রাউজারটির দাম পড়েছিল ৬০০ মিলিয়ন ডলার। ওইসময়ে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৩৫০মিলিয়ন।
ক্রোম কে কিনতে পারে ?
ইমার্কেটার বিশ্লেষক ইভলিন মিশেল উলফের মত, ক্রোমের জন্য খুব বেশি ক্রেতা পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এআই বিষয়ক কোম্পানিগুলো ক্রেতার তালিকায় যোগ হলেও হতে পারে। ক্রেতার তালিকায় থাকতে পারে ইলন মাস্কের এআই স্টার্টআপ। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইলন মাস্কের ঘনিষ্ঠতার কারণে এই চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হলও হতে পারে বলে মত ইমার্কেটার বিশ্লেষকের।