রিয়া দাস, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ টানা দেড় বছর ধরে মেইতেই-কুকি সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুর। দফায় দফায় উত্তেজনা যেন থামার নামই নিচ্ছে না। এরই মধ্যে মেইতেই পরিবারের ৬ সদস্যের মৃত্যুতে ফের অগ্নিগর্ভ মণিপুর। মণিপুরের মেইতেই পরিবারের নিহত সেই ছয় জন সদস্যের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এল প্রকাশ্যে। কী ভাবে অত্যাচার করে তাঁদের মারা হয়েছে, রিপোর্টে তার উল্লেখ রয়েছে।
অত্যাচারের বিবরণ রিপোর্টে উল্লেখ
শুধু গুলি করে হত্যা নয়, মৃত্যুর আগে নৃশংস অত্যাচার চালানো হয়েছিল মেইতেই পরিবারের ৬ সদস্যের উপর। এই অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পায়নি ২ বছরের শিশুও। পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে ৩ জনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে দেখা গিয়েছে, দুই বছরের শিশুর হাত ভেঙে, চোখ উপড়ে তার বুকে ছুরি মারা হয়। এর পর মাথার মাঝখানে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। শিশুটির মা ও দিদিমার শরীরেও একাধিক গুলি পাওয়া গিয়েছে। চলেছে নৃশংস অত্যাচার।
মণিপুরের জিরিবাম জেলার একটি মেইতেই পরিবারের ৬ জনকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছিল কয়েকদিন আগে। অভিযোগের আঙুল ওঠে কুকি সম্প্রদায়ের দিকে। অসম সীমানা লাগোয়া অঞ্চল থেকে অপহরণ করা হয়েছিল ওই ৬ জনকে। পরে জিরিবামের নদীতে শিশু ও বৃদ্ধার মুণ্ডহীন দেহ ভেসে এসেছিল। যা দেখে শিউড়ে ওঠেছিলেন অনেকেই। মৃতদের পরিবার শনাক্তও করেছিল ভেসে আসা মুণ্ডহীন দেহগুলি। মৃত ৬ জনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হলেও রিপোর্ট এসেছে মাত্র তিনজনের। এমনটাই অভিযোগ মৃতদের পরিবারের সদস্যদের। থানায় রিপোর্টের জন্য আবেদনও জানানো হয়েছে মৃতদের পরিবারের তরফে।
শিশু চোখ উপড়ে মাথায় গুলি
নৃশংস ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, দুই বছরের শিশুর হাত ভাঙা ছিল, বুকে ও হাতে ছিল চুরির আঘাত ও তার মাথায় ঠিক মাঝখানে গুলি চালানো হয়। শিশুটির মা ২৫ বছর বয়সি ওই মহিলার বুকে তিনটি ও নিতম্বে একটি গুলির আঘাত পাওয়া গিয়েছে। তার ৬০ বছর বয়সি দিদিমার মাথা, বুক, পেট ও হাতে ৫টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। ওই পরিবারে ছিলেন আরও ৩ সদস্য এক মহিলা, আট বছরের এক কন্যা ও আট মাসের এক শিশু। তাদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও পায়নি পরিবার।
গত ১১ নভেম্বর থেকে নতুন করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে মণিপুরের পরিস্থিতি। জিরিবাম জেলায় হামলা চালায় কুকি সম্প্রদায়। সেই ঘটনায় নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে ১০ জঙ্গির মৃত্যু হলেও এক ত্রাণ শিবির থেকে মেইতেই সম্প্রদায়ের ৬ জনকে অপহরণ করে কুকিরা। পরে তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
এই ঘটনার পর থেকে নতুন করে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে মণিপুর। পরিস্থিতি সামাল দিতে এই রাজ্যে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। মণিপুরের এই ঘটনায় কুকি সম্প্রদায়ের হাত রয়েছে, জানিয়েছে সে রাজ্যের সরকারও। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ এই তদন্ত করছে।