মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ভারতে উৎপাদিত রান্নার হলুদে মেলানো হচ্ছে ২০০ গুণ বেশি লেড বা সিসা। সিসা নামক এই নরম ধাতু শরীরে ঢোকায় প্রতিবছর ৫৫লক্ষ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। রক্তের সঙ্গে মিশে সিসা অনেকটা ক্যালসিয়ামের মতো কাজ করে। এটি হাড়ের সঙ্গে আটকে যায়। এর ফলে হৃদরোগ এবং ফুসফুসের রোগ হতে পারে। নেদারল্যান্ডের একটি সায়েন্স জার্নালে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
ডিসেম্বর ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১-এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের ২৩টি বড় শহর থেকে মোট ৩৫৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ১৮০টি ছিল হলুদের মূল এবং ১৭৬টি নমুনা ছিল হলুদ গুঁড়ো। ওই সমস্ত নমুনা পরীক্ষার পরই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। ভারতের পাটনা, পাকিস্তানের করাচি ও পেশাওয়ার থেকে আনা হলুদের নমুনায় সিসার মাত্রা ছিল ২০০ গুণ বেশি। লখনউ, চণ্ডীগড়, ভূবনেশ্বর, অমৃতসর, চেন্নাই ও গৌহাটি থেকে আনা নমুনাতেও সিসার মাত্রা ছিল বেশি। এক গ্রাম পেশাই করা হলুদে সিসার মাত্রা ১০ মাইক্রোগ্রাম বা তার চেয়ে কম হওয়া উচিৎ। কিন্তু গৌহাটির নমুনায় ছিল ১২৭ মাইক্রোগ্রাম সিসা। অর্থাৎ আপনি আসলে হলুদ নয়, সিসা খাচ্ছেন।
হলুদ মেশানো দুধ খেলে নাকি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায়। পুরনো এই কথা মেনে দুধে হলুদ মিশিয়ে খেলে চরম ভুল করছেন। কারণ এইসব সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী সেই হলুদে সিসার পরিমাণ অনেক বেশি। যা শরীরে ঢুকে আপনার মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে।
হলুদের রঙকে আরও গাঢ় ও আকর্ষণীয় করার জন্য এতে মেশানো হয় লেড ক্রোমেট। এর ফলেই সিসার পরিমাণ হু হু করে বাড়ছে বাজার থেকে কিনে আনা হলুদে। করোনাকালে ইমিউনিটি বৃদ্ধির জন্য কারার পাশাপাশি হলুদ মেশানো দুধ খাওয়ার কথাও বলছিলেন ডাক্তার এবং পুষ্টিবিদরা। সেই হলুদে পাওয়া লেড বা সিসার পরিমাণ ব্যাপক। যার ফলে ক্রমেই প্রাণঘাতী হয়ে যাচ্ছে এই হলুদ। বলে দেওয়া প্রয়োজন, এই সমীক্ষার জন্য যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল তাও করোনাকালেই করা হয়েছিল।
ভারতের ৩০ কোটি মানুষের রান্নাঘরে প্রতিদিন হলুদের ব্যবহার হয়। ভারতে উৎপন্ন হওয়া হলুদ বিশ্বের ১৬০টি দেশে রফতানি করা হয়। এর ফলে ২০০০ কোটি টাকা আয় করে ভারত। ২০১৮ সালে ১ কুইন্টাল হলুদের দাম ছিল ৬ হাজার ৪০০টাকা। বর্তমানে সেই দাম হয়েছে ১১ হাজার ৫০০টাকা। অর্থাৎ ৮০শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে হলুদের দাম। অর্থাৎ মানুষ হলুদের জন্য বাড়তি টাকা দিচ্ছেন। অথচ হাতে পাচ্ছেন সেই নকল হলুদই। এর পিছনে রয়েছে লোভ। বেশি মুনাফা কামানোর জন্য যেকোনও উপাদান মিশিয়ে দিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। তা প্রাণঘাতী হলেও পিছপা হচ্ছেন না তারা। স্লো পয়েজনিংএর মাধ্যমে মানুষকে এভাবেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে এই অসাধু ব্যবসায়ীরা।
কীভাবে চিনবেন আসল হলুদ ?
জলে হলুদ গুঁড়ো মেশালে যদি গাঢ় হলুদ রঙ দেখা যায়, তাহলে বুঝবেন সেটি আসল হলুদ নয়।
আসল হলুদ গুঁড়ো জলে থিতিয়ে যাবে। তা যদি উপরে ভেসে ওঠে, তবে বুঝবেন তা আসল হলুদ গুঁড়ো নয়
আসল হলুদ হাতের তালুতে ঘষলে হালকা হলুদ রঙ লেগে যাবে হাতে। হাত ধুলেও সেই হলুদ রঙের আভা হাতে থাকবে। এইভাবেই আসল হলুদ খুব সহজেই চিনতে পারবেন।