নারায়ণ দে, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ৮ নভেম্বর, ২০১৬। রাত ঠিক ৮টায়, জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক নয়া সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ঘোষণা করেন। পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিলের ঘোষণা। তখন বাজারে মোট ধনরাশির ৮৬ শতাংশই ছিল পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ”দুর্নীতি, কালো টাকা, জাল নোট এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে, আমাদের দেশকে শুদ্ধ করার লক্ষ্যে, দেশবাসী কিছু দিনের জন্য অসুবিধা সহ্য করতে পারবে না? আমার পূর্ণ আস্থা আছে যে প্রতিটি নাগরিক উঠে দাঁড়াবে এবং এই ‘মহাযজ্ঞে’ অংশগ্রহণ করবে।” প্রধানমন্ত্রীর কথায় দেশবাসী ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়ায়। একইসঙ্গে একশো টাকার নোট পেতে লাইন দিয়েছিল এটিএম-এ। বিভিন্ন লাইনে দাঁড়িয়ে একাধিক মানুষের মৃত্যুর পর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
নোট জমা করার নির্দিষ্টদিনের পর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া জানায়, প্রায় ৯৯ দশমিক ৩ শতাংশ নোট ব্যাঙ্কে ফিরেছে। কিন্তু জালনোটের কারবার, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদ কি বন্ধ হয়েছে? ৮ বছর পেরিয়ে ফের ৮ নভেম্বর। সুফল না কুফল, ২০২৪-এ দাঁড়িয়ে নোটবাতিলের কোন ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের? চলুন দেখা যাক।
জালনোট
নোটবাতিলের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল জালনোট নির্মূল করা। অথচ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে যেখানে প্রায় ১৬ কোটি টাকার জালনোট উদ্ধার বা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, পরবর্তী বছরগুলি জালনোটের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ২০১৭ সালে ২৮ কোটি, ২০১৮ সালে প্রায় ১৮ কোটি, ২০১৯ সালে ২৫ কোটি, ২০২০ সালে ৯২ কোটি টাকার জালনোট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ক্রমাগত জালনোট বৃদ্ধির কারণে ১৯ মে, ২০২৩-এ দুহাজার টাকার নোটও বাতিল করে দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।
কালো টাকা
নোটবাতিলের আরও একটি উদ্দেশ্য ছিল কালো টাকা নির্মূল করা। নগদ টাকার বদলে অনলাইন পেমেন্টের ওপর জোর দিয়েছিল সরকার। অর্থাৎ নগদ লেনদেন কমলে কালো টাকার পরিমাণও কমবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে যেখানে নগদ অর্থের লেনদেন হয়েছিল প্রায় ১৭ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে নগদ লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ দ্বিগুণ। সবচেয়ে বেশি নগদ লেনদেনের পরিমাণ রিয়েল এস্টেটে। যেখানে সাধরণ মানুষের স্বার্থ নেই বললেই চলে।
দুর্নীতি
নোটবাতিলের পর থেকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি সূচকে ভারতের স্থান ক্রমেই নেমেছে। ১৮০টি দেশ নিয়ে করা এই সমীক্ষায় ২০১৬ সালে ভারতের স্থান ছিল ৭৯। বর্তমানে ভারতের স্থান ৯৩-এ। সরকারি, বেসরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির পরিমাণ যে দিন দিন বেড়েই চলেছে, তা এই রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট।
সন্ত্রাসবাদ
বাজারে জালনোট, কালো টাকা নির্মূল হলে সন্ত্রাসবাদও কমবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু এখানেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। ২০১৭-য় ভোপালে প্যাসেঞ্জার ট্রেনে জঙ্গি হামলা থেকে ২০১৯-এ পুলওয়ামা। চলতি বছরের অক্টোবরেও জম্মু ও কাশ্মীরের গান্দেরবলে জঙ্গি হামলায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নোটবালিতের পর থেকে মোট ২২টি বড়সড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে সারাদেশ জুড়ে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ থেকে যুক্তিবাদী সমাজবিদরা অনুমান করেছিল নোটবাতিল প্রকৃত অর্থে একটি সঙ্কট ছিল। যা আজও কাটেনি। কিন্তু সরকার কি নোটবাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা নিয়েছে?