সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- বর্তমান পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের চকওয়াল জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম “গাহ”। এই গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক স্কুলের নাম সারা পঞ্জাবের মানুষ এক ডাকে চেনে। তবে এই স্কুল যাঁর নামে তাঁকে চেনে গোটা বিশ্ব। তিনি হলেন সদ্য প্রয়াত দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মনমোহন সিং। তাঁর স্মৃতিতেই স্কুলের নাম পরিবর্তন করে মনমোহন সিং প্রাথমিক বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়েছে। যদিও এই স্কুলের প্রাক্তনীদের মধ্যে রয়েছেন “সারে জাঁহাঁ সে আচ্ছা”র স্রষ্টা মহম্মদ ইকবাল, মহম্মদ আলি জিন্নাহ এবং আব্দুল কাদির খান। পুরনো রেজিস্ট্রার খুঁজলে পাওয়া যায় জ্বলজ্বল করছে রোল নম্বর ১৮৭-র ছাত্র ডঃ মনমোহন সিংয়ের নাম। পাকিস্তানের এই গাহ গ্রামেই জন্ম মনমোহন সিংয়ের। ১০ বছর বয়স পর্যন্ত এই গ্রামেই কাটিয়েছেন তিনি। মাটির গাঁথনির ইটের দেয়ালের বাড়ি সাক্ষী হয়ে রয়েছে দুই দেশের বিভাজনের। ২০০৪ সালে মনমোহন সিং প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গ্রামবাসী আনন্দে মেতে ওঠে। অনুন্নত, পিছিয়ে পড়া এই গ্রামের ভাগ্য বদল হয় অনেকাংশে মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর। তারপরেই পঞ্জাব সরকার গাহকে মডেল গ্রাম হিসাবে ঘোষণা করে এবং উন্নয়নের জন্য ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। দিল্লির টাটা এনার্জি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা “টেরি”-র উদ্যোগে গাহ গ্রামে একটি সৌরশক্তি প্রকল্প চালু করা হয়। এর মাধ্যমে ১৬টি সৌর আলোর খুঁটি গোটা গ্রামের ৫১টি পরিবারের সাহায্যে আসে। পাশাপাশি গ্রামের মসজিদের জন্যও একটি সৌর জলতাপ গরম করার ব্যবস্থা করা হয়। গ্রামের স্থানীয়দের এই ব্যবস্থাগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই প্রকল্প শুধু মাত্র গ্রামের বিদ্যুৎ সমস্যা মেটায়নি। এই প্রকল্প ২ দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। “টেরি”-র প্রতিনিধি যখন ওই গ্রামে যান, সেই সময় বাসিন্দারা আরও দাবি-দাওয়া জানান। দীর্ঘদিন গ্রামের শৈশবের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। এমনকী বন্ধুরা মারা যাওয়ার পরও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন তিনি। গাহ গ্রামে এখনও তাঁর স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। তাঁর এক আত্মীয়ের পুরনো বাড়িটি আজ পরিণত হয়েছে কমিউনিটি সেন্টারে। বর্তমানে সেখানে গুরমুখী লিপিতে লেখা “সৎ শ্রী আকাল”। তবে তাঁর পৈতৃক ভিটে আজ ফাঁকা উঠোন। নেই সেখানে তাঁর শৈশবের বাড়ি।