প্রকাশিত হল বৃত্তি পরীক্ষার ফল। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পর্ষদের তরফ থেকে এই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। মূলত প্রাথমিক স্তরে চতুর্থ শ্রেণির শেষে ছাত্রছাত্রীদের জন্য পড়াশোনার মূল্যায়ন হেতু এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রতি বছরই ক্রমশ বাড়ছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা।
নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক প্রকাশিত হল বৃত্তি পরীক্ষার ফল। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পর্ষদের তরফ থেকে এই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। মূলত প্রাথমিক স্তরে চতুর্থ শ্রেণির শেষে ছাত্রছাত্রীদের জন্য পড়াশোনার মূল্যায়ন হেতু এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ বছর রাজ্যের সমস্ত জেলায় ২৩০০ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১, ৬৮,৩৮২ জন। এই পরীক্ষায় পাশের হার ৭৭.১১ শতাংশ। প্রথম বিভাগে পাশ করেছে ২৭.৯৭ শতাংশ, দ্বিতীয় বিভাগে ২১.৪৬ শতাংশ ও সাধারণ বিভাগে ২৭.৬৬ শতাংশ। এবছর প্রথম হয়েছ তিনজন পরীক্ষার্থী, দ্বিতীয় হয়েছে ছয় জন পরীক্ষার্থী আর তৃতীয় হয়েছে পাঁচ জন পরীক্ষার্থী। বাংলা, হিন্দী ও উর্দু মাধ্যমে মাতৃভাষা, গণিত, সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। ১৯৯২ সাল থেকে (করোনাজনিত কারণে ২০২০ ও ২০২১ বাদে) ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে এই পরীক্ষা হয়ে চলেছে। এক ঐতিহাসিক ভাষা শিক্ষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও অন্যতম বিশিষ্ট একজন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সুশীলকুমার মুখার্জীর সভাপতিত্বে এই পরীক্ষার শুরু। প্রতি বছরের মত কৃতী পরীক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার জন্য বার্ষিক বৃত্তি (রাজ্য ১২০০/- ও জেলা বৃত্তি ৬০০/-টাকা) এবারেও দেওয়া হবে। এবছর ৮২০ জন কৃতী পরীক্ষার্থীকে আগামী ২০২৫ সালে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিরোজিও হল’ -এ ৩০ মার্চ এবং পরবর্তী ৬ এপ্রিল রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে এই কৃতী পরীক্ষার্থীদের সম্বর্ধিত করা হবে। বৃত্তিবাবদ সমূহ অর্থ সরবরাহ করেন শিক্ষাপ্রেমী দাতাগন। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে ভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন রাজ্যের হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, “স্বাভাবিকভাবে আশা করা যায় যে, জনসংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেও সমাজের অগ্রগতির স্বার্থে রাজ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়বে, শিক্ষক প্রয়োজনীয় হারে বাড়বে। কিন্তু তা বর্তমানে দুরাশা। কারণ সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষা পরিকাঠামো এমন দুর্বল করে রাখা হয়েছে যে, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহু অর্থ ব্যয় করে অনিচ্ছকৃতভাবে শিক্ষার্থীকে ভর্তি করতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকবৃন্দ। এভাবে সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে একদিকে যেমন নিজের দায় এড়াচ্ছে আবার অন্যদিকে শিক্ষাকে পণ্যে রূপান্তরিত করছে। এমতাবস্থায় ‘প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পর্ষদ, পশ্চিমবঙ্গ’ প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার মানোন্নয়নের স্বার্থে মাত্র ৩০ টাকা পরীক্ষার ফিজ -এর বিনিময়ে ৫-দিনের পরীক্ষা পরিচালনা করছে। এই অর্থে, এই পরীক্ষা নিছক কোন মেধা পরীক্ষা নয়, বরং এটি এমন একটি শিক্ষা আন্দোলন, যা বিগত ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে চলছে।” আয়োজকদের সরকারের কাছে দাবি “সরকারি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নত করতে হবে; শিশুদের মানুষ হওয়ার জন্য উপযুক্ত পাঠক্রম প্রণয়ন করতে হবে এবং প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ-ফেল চালু করতে হবে।”এতদিন প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ফেল নীতি নেই। ২০১০ সালের শিক্ষানীতি অনুযায়ী পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ফেল পদ্ধতি তুলে দেওয়া হয়েছিল। তবে এবার শিক্ষানীতির সংশোধন করতে চলেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক।ফের ফিরছে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ‘ফেল’ নীতি। যদিও সব রাজ্যে সামগ্রিক ভাবে এই নীতির বদল ঘটছে না। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন পর্ষদের আধিকারিকদের দাবি এই ফেল নীতি প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লাগু করতে হবে। যতদিন এই দাবি পূরণ না হচ্ছে ততদিন চলবে আন্দোলন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।