সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- মুম্বই যাত্রায় পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের স্থান এলিফ্যান্টা কেভ। প্রতিদিন শয়ে শয়ে মানুষ বিপদের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা পারাপার করে এই স্থান দেখতে যান। বুধবারও এই রকমই যাত্রী বোঝাই একটি ফেরি এলিফ্যান্টা দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। কিছুটা যেতেই নৌবাহিনীর একটি স্পিডবোট ধাক্কা দেয় ফেরিতে। ডুবে যায় ফেরিটি। প্রাথমিক পর্যায়ে ২ জন মৃত জানতে পারা গেলেও পরে মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩। এলিফ্যান্টা কেভের জন্য এই দ্বীপটির নাম এলিফ্যান্টা দ্বীপ হলেও আসল নাম ঘারাপুরী দ্বীপ। ইতিমধ্যেই এই পর্যটন স্থান ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমাও পেয়েছে। শুধু দেশের নয়, প্রচুর বিদেশী পর্যটকরাও ভিড় জমান এই গুহায়। গুহার শহর বলে এই দ্বীপ পোরি দ্বীপ নামেও জনপ্রিয়।
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে পাহাড় কেটে এলিফ্যান্টা গুহার নির্মাণকাজ শুরু হয়, যা চলে পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শতকের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত। প্রধান গুহাটি, তার প্রবেশ পথ থেকে প্রায় ৩৯ মিটার দীর্ঘ। গুহার মূল দ্বারটি অনেকটা হাতির মুখের আদলে হওয়ায় এর নাম রাখা হয় এলিফ্যান্টা কেভ। এই কেভটির সঙ্গে অনেকটা মিল রয়েছে ইলোরার দুমার লেনা কেভের সঙ্গে। ৭ মিটার উচ্চতার “সদাশিব” প্রথম গুহার প্রবেশ পথে দেখতে পাওয়া যাবে। এখানে শিবের সৃষ্টি, পালন ও ধ্বংসকর্তা হিসাবে ত্রিমূর্তির সম্মিলিত রূপকে তুলে ধরা হয়েছে। শিবভক্ত বা পুণ্যার্থীদের কাছে এই গুহার মাহাত্ম্য অপরিসীম।
বুধবারের নৌকাডুবির পর এই স্থানে যাওয়ার জন্য পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ এই গুহা যেতে গেলে একমাত্র জলপথই হল উপায়। গেট অফ ইন্ডিয়ার কাছ থেকে ফেরির মাধ্যমে আরব সাগরের উপর দিয়ে এই গুহায় যাওয়া যায়। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় ফেরি দুপুর পর্যন্ত চলে যাওয়ার ফেরি। ফলে প্রতিদিনই প্রচুর মানুষের ভিড় হয় ফেরিগুলিতে। ফেরিগুলি চালায় গেটওয়ে এলিফ্যান্টা জল- বাহাতুক সহকারী সংস্থা। প্রায় ১০০টি ফেরি প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ বার যাওয়া আসা করে। এক একটিতে গড়ে ৫০ থেকে ১০০ জন যাত্রী নিয়ে যাওয়া যায়। ফেরি থেকে মুম্বই শহরকে দেখতেও আকর্ষণীয় লাগে। এলিফ্যান্টা কেভ নামটি পর্তুগিজদের দেওয়া। ফেরি সফরে লাগে প্রায় এক ঘন্টা। ফেরি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গুহায় পৌছতে হয় নতুবা একটি ন্যারো গেজ টয় ট্রেনের মাধ্যমে ফেরি ঘাটের কাছ থেকে গুহা পর্যন্ত যাওয়া যায়।
আগামীদিনে মুম্বইয়ের হাজি বন্দর থেকে সরাসরি রোপওয়ের মাধ্যমে এই দ্বীপে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে মুম্বই পোর্ট ট্রাস্ট। যদি রোপওয়ে পথ চালু হয় তাহলে এই দ্বীপে পৌছতে সময় লাগবে মাত্র ১৪ মিনিট। ফলে যাত্রী পরিষেবা বা পর্যটকদের কাছে আরও সুবিধাজনক হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।