শনিবার পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ কৃত্য সম্পন্ন হল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের। জীবনে তিনি সব পেলেন শুধু রয়ে গেল আক্ষেপ, যাওয়া হল না পাকিস্তানে। কিন্তু কেন এই আক্ষেপ?
সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, সাংবাদিক: প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সময় কালে অনেক কিছু পেয়েছে ভারত, তার অবদান অনস্বীকার্য। মনমোহন সিং জীবনে সবকিছু পেলেও এক আক্ষেপ নিয়ে চলে গেলেন তিনি। তার একবার ভীষণ যাওয়ার ইচ্ছে ছিল পাকিস্তানে কিন্তু পরিস্থিতি সেই ইচ্ছেকে সত্যি হতে দিল না।
মনমোহন সিংয়ের জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানে। ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানে তবে সেই সময় ভারত ছিল অবিভক্ত, সেই সময়ের পাঞ্জাবের গাহতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।দেশভাগের পর তারা চলে আসেন কিন্তু তার মন থেকে জন্মভিটের স্মৃতি জীবন্ত ছিল বরাবর। তাই মনমোহন সিংয়ের ইচ্ছা ছিল একবার জন্মভিটেতে যাওয়ার তবে পরিস্থিতি এমন ছিল যে তা অপূর্ণই রয়ে গেল।
বিদেশে যখন তিনি কাজ করছেন সেই সময় তিনি তার এক পাকিস্তানি বন্ধুর সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডিতে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানকার গুরুদ্বারেও যান, যেখানে তিনি শৈশবে বৈশাখীর দিন যেতেন। কিন্তু তিনি নিজের গ্রামে যেতে পারেননি। তিনি চেয়েছিলেন ছোটবেলায় যে স্কুলে তিনি পড়তেন সেই স্মৃতি বিজড়িত স্কুলটিকেও একবার দেখার। সেই স্কুলের নাম পরে তার নামেই হয়েছে। ২০০৪ সালে মনমোহন সিং যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তার গ্রাম, সেই গাহের মানুষ আনন্দে মেতে উঠেছিলেন। তার এই সাফল্যের হাত ধরে বদলে যায় গ্রামের ভাগ্যও। পাঞ্জাব সরকার গাহকে মডেল গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করে এবং উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করে ১১ কোটি টাকা।
সেই মানুষটার মৃত্যুসংবাদে এই গ্রামেও নেমে এসেছে তীব্র শোকের ছায়া। আয়োজন করা হয় মনমোহনের স্মরণসভার। গ্রামবাসীরাও শোকস্তব্ধ ঘরের ছেলেকে হারিয়ে। স্মরণসভায় স্মরণ করা হয় তাকে কেন্দ্র করে নানা স্মৃতি। তার সঙ্গে একই স্কুলে পড়েছেন, এমন অনেক মানুষই এখনও আছেন গাহতে। ছোটবেলার বন্ধুকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ তারাও। তাদেরও মনে হচ্ছে যেন নিজেদের পরিবারের কেউ হারিয়ে গেছেন। ভারতে এসে তার শেষকৃত্যে অংশ নিতে চেয়েছিলেন অনেকেই কিন্তু সেটা সম্ভব না। এর পাশাপাশি পাকিস্তান সরকারও শোকপ্রকাশ করেছে তার প্রয়াণে।