নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক: প্রতীক্ষার অবসান। ৪ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এদিন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন। অর্থাৎ এদিন কলকাতায় বসতে চলেছে ফের চাঁদের হাট। কল্লোলিনী তিলোত্তমার বাসিন্দারা ফের দেশ- বিদেশের সিনেমার প্রেমে মজে উঠবে ডিসেম্বরের গোড়াতে। এবার এই উৎসবের ৩০তম বর্ষ। তাই অন্যবারের তুলনায় এবার আরও জাঁকজমকপূর্ণ হবে এই অনুষ্ঠান তার আভাস মিলছে এবারের এই উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন পোস্টার দেখে। আধুনিক পদ্ধতিকে প্রয়োগ করা হয়েছে এবারের পোস্টারে। বাংলা ও বিদেশের বেশকিছু চলচ্চিত্রের ঐতিহাসিক সিন বা নায়ক-নায়িকার ছবিতে এআই পদ্ধতি প্রয়োগ করে তুলে ধরা হয়েছে, যা এক অনবদ্য রূপ নিয়েছে। যেমন এই পথ যদি না শেষ হয়…’ উত্তম সূচিত্রা অভিনীত সপ্তপদী সিনেমার এমন একটি গান যা ওই সিনেমাটিকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। ১৯৬১ সালে নির্মিত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে অজয় কর পরিচালিত এই প্রতিটি বাঙ্গালির কাছে প্রিয় একটি ছবি। নবম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিল এই ছায়াছবিটি।এখানে উত্তম কুমার অভিনয় করেছিলেন কৃষ্ণেন্দু চরিত্রে ও সুচিত্রা সেনের রিনা ব্রাউনের চরিত্রে অভিনয়। এই দুই কিংবদন্তীর অভিনয় আজও বাঙালিকে মুগ্ধতার শিখরে রেখে দিয়েছে। সেই অবিস্মরণীয় গানের বাইকে চড়া উত্তম-সুচিত্রার প্রেমের মুহূর্তটি তুলে ধরা হয়েছে উৎসবের পোস্টারে। তবে ছবিটিকে সাদা কালোর জায়গায় দেওয়া হয়েছে এক অন্যরূপ। ধুলোর আস্তরণের একটি ছায়াঙ্কনে হলদেটে মাটির অবয়বে স্মৃতির মায়াজাল তৈরি করা হয়েছে ছবিতে। পুরনো অথচ তারমধ্যে নতুনের এক অদ্ভুত মিশেল রয়েছে এই পোস্টারে। আর সেখানে লেখা রয়েছে বাংলার মাটিতে বিশ্বের ছবি। আর এই নতুন রূপের পোস্টার নজর কাড়ছে সিনে প্রেমীদের। এরপর উত্তম কুমার অভিনীত আরও একটি সিনেমা “নায়ক’। যেখানে নায়িকার ভূমিকায় দেখা যায় শর্মিলা ঠাকুরকে। বাংলা সিনেমার অন্য এক কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে রাজধানী এক্সপ্রেসের চওড়া জানালার ধারে রেস্তরাঁয় বসে উত্তম কুমারের ইন্টারভিউ নিচ্ছেন শর্মিলা ঠাকুর। সিনেমার সেই মুহূর্তটি ধরা পড়েছে এবারের চলচ্চিত্র উৎসবের পোস্টারে। এছাড়াও আরও একটি পোস্টারকে দেখা মিলবে অপু-দূর্গার সঙ্গে।পথের পাঁচালীর এই দৃশ্যে অপু-দুর্গার অজানার সন্ধানে প্রথম রেলগাড়ি দেখার দৃশ্য। যা দেখে আজও মুগ্ধ হয় বাঙ্গালি। চলচ্চিত্র উৎসবে ব্যবহৃত এই পোস্টারেও একটি ধূলোর আস্তরণের মায়াজাল লক্ষ্য করা যাবে যা পোস্টারটিকে এক অন্যরূপ দিয়েছে। এছাড়া আট থেকে আশি সকলের প্রিয় কল্পবিজ্ঞান নির্ভর ছবি জুরাসিক পার্ক।সেই ছবিরই গাছের আড়ালে ডায়নোসরের অবয়বও ধুলোমাটির রঙের আদলে বিজ্ঞানের কেরামতিতে দেখানো হয়েছে । এছাড়া ১৯৭৬ সালের রবার্ট ডি নিরোর ট্যাক্সি ড্রাইভার ছবি ইতিহাসের পাতায় অনেক আগেই জায়গা করে নিয়েছে। এই ছবির মূল চরিত্র ট্র্যাভিস নিউইয়র্কের রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে আরও এআই পদ্ধতির প্রয়োগ করে সাদাকালো যুগের সিনেমার একটি আবছায়া এনে মাটির ম্যুরাল টাইপের ছবি তৈরি করা হয়েছে। যা এক অপরূপ রূপ দিয়েছে পোস্টারটিকে। এই প্রতিটি ছবিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আর তার সঙ্গে প্রয়োগ করা হয়েছে গ্রাফিক্স ডিজাইনের যুগলবন্দি। প্রতিটি ছবিতেই আনা হয়েছে মাটির মূর্তির একটি সোঁদা ভাব। যেখানে গ্রামবাংলার মাটির ধূসর প্রলেপ ছবিগুলিকে এক অন্যমাত্রা দিয়েছে। যা অবশ্যই মুগ্ধ করছে সিনেপ্রেমীদের।