বিষাক্ত স্যালাইন কাণ্ডের জেরে তোলপাড় গোটা রাজ্য। ফের প্রশ্নের মুখে রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এবার তদন্ত কমিটির রিপোর্ট থেকে ফের প্রকাশ্যে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, সাংবাদিক: সোমবার ফের একবার স্বাস্থ্য ভবনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের ঘটনায় গঠিত হওয়া ১৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির। স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সহ একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিক রিপোর্টে একাধিক তথ্য উঠে এসেছে তার মধ্যে বেশ কিছু তথ্য অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর। শুধুমাত্র একটি স্যালাইন কেই দায়ী করা হচ্ছে না প্রাথমিক রিপোর্টে। দুটি বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। একটি হল হিউম্যান এরর পার্ট এবং অপরটি হলো কেমিক্যাল এরর পার্ট।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর প্রাথমিক রিপোর্টে তারা পেয়েছেন, গত ৮ জানুয়ারি রাতে হাসপাতালে পর-পর পাঁচ প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেছেন মেডিক্যালের স্নাতকোত্তরের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষানবিশ বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি চিকিৎসকেরা। অস্ত্রোপচারের আগে, প্রসূতিদের অজ্ঞান করার জন্য কোনো সিনিয়র অ্যানেসথেটিস্টও অপারেশন থিয়েটারে ছিলেন না। সেই কাজ করেন মেডিক্যালের স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষের পিজিটিরা। সেদিনকার সমস্ত সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, সেই ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
চিকিৎসকদের মত সাধারণ প্রসব যদিও প্রয়োজনে পিজিটিরা করাতে পারেন, কোনও ভাবে সিজার তাদের একক দায়িত্বে করার কথা নয়। পিজিটিরা অপারেশন থিয়েটারে সিনিয়র চিকিৎসককে সাহায্য করতে পারেন, কাজ শিখতে পারেন বা বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে অস্ত্রোপচার করতে পারেন। কিন্তু কোনও ভাবেই সিনিয়র চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে বা নজরদারি ছাড়া অস্ত্রোপচার করতে পারেন না।কারণ, অস্ত্রোপচারে জটিলতা হলে পিজিটিদের পক্ষে তা সামলানো দুষ্কর। সেটা নিয়মবিরুদ্ধ।
কেমিক্যাল এররের পার্ট সম্পর্কে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বেশ কিছু প্রশ্ন তদন্ত কমিটিকে ভাবাচ্ছে। ধরা যাক, স্যালাইন নিম্নমানের। তাহলে সেই ব্যাচের স্যালাইন তো আরও রোগীদের দেওয়া হয়েছিল। সেখানে গোলমাল হল না কেন? রিংগার ল্যাকটেট, অক্সিটোসিন, গ্যাসের ওষুধ, সেপট্রায়োজোনসহ ৫ ধরনের কমন ওষুধ ও ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল প্রসূতিদের। সেগুলির নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে ড্রাগ টেস্টের জন্য। কিন্তু প্রশ্ন হল, যে পরিমাণ রিংগার ল্যাটেক গাইনিতে ব্যবহার হয়, তার ১০ গুণ ব্যবহার হয় মেডিসিন ও অন্য বিভাগে। সেপট্রায়োজোনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক, একই গ্যাসের ওষুধও মেডিসিনসহ বহু বিভাগে গাইনির তুলনায় অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়। সেখানকার রোগীদের তো কোনও বিপদ হল না, হল ওই পাঁচজনের!
সেই কারনে সেদিন ওই বিভাগে ব্যবহৃত সমস্ত ওষুধের স্যাম্পেল টেস্টিং ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। টেস্টিং ল্যাবের রিপোর্ট দ্রুততার সঙ্গে হাতে পাওয়ার চেষ্টা করছে তদন্ত কমিটি। সেই রিপোর্ট হাতে পেলেই কেমিক্যাল এররের দিকটি আরও পরিষ্কার হবে।।