মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স শহরে ভয়ঙ্কর জঙ্গিহানার ঘটনায় অন্তত ১৫জন নিহত হয়েছেন। জখম হয়েছেন অন্তত ৩০জন। স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে নিউ অরলিন্স শহরের বারবন স্ট্রিটের বর্ষবরণের ভিড়ের মধ্যেই ঢুকে পড়েছিল একটি ভ্যান। চালক বছর৪২-এর শামসুদ-দিনের গাড়ির ধাক্কায় এই হত্যালীলার ঘটনা গিয়েছে। ঘটনায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেছেন, “যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের জন্য শোকাহত গোটা দেশ। কী ঘটেছে, কেন এমনটা ঘটেছে এবং জননিরাপত্তায় কোনও হুমকি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত করছে এফবিআই।”
ঘটনার পরই ছন্দপতন হয়েছে আমেরিকার বর্ষবরণ উৎসবে। হত্যাকারী শামসুদ-দিন জব্বার একজন আইএস অর্থাৎ ইসলামিক স্টেটের জঙ্গি ছিল বলে মনে করছেন সে দেশের তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই। ঘাতক গাড়িতে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ছিল। ভিড়ের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে ঢুকে পড়ে শামসুদ-দিন। তারপর রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানোর উদ্দেশ্য ছিল তার। গাড়ি থেকে নেমে গুলি চালাতে চালাতে ভিড়ের মধ্যে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করে সে। কিন্তু তার আগেই নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে নিহত হয় ওই জঙ্গি।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, শামসুদ-দিনের পোশাকের ভিতরে আইএসের পতাকা পাওয়া গিয়েছে। গাড়িতেও ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনের পতাকা মিলেছে। ঘাতক শামসুদ-দিন টেক্সাসের বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে আইএস যোগ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে গোয়েন্দাদের মত, নিহত জঙ্গি একা নন, গোটা ঘটনার পিছনে বড় চক্রের হাত আছে। গোয়েন্দা সূত্রে একের পর এক তথ্য উঠে আসছে, যা নিয়ে হতবাক সকলে। জঙ্গি শামসুদ-দিন একসময়ে মার্কিন সেনায় ছিলেন। আইটি বিশেষজ্ঞও ছিল। বিশ্ববিখ্যাত সংস্থা ডেলয়েটে বার্ষিক ১ লক্ষ ২০ হাজার ডলার বেতনের চাকরিও করত সে। রিপোর্ট অনুযায়ী প্রাক্তন স্ত্রীর আইনজীবীকে ইমেল করে শামসুদ-দিন দাবি করেছিল, তার বাড়ির ঋণের কিস্তি বাবদ ২৭ হাজার ডলার বকেয়া রয়েছে। ক্রেডিট কার্ডে ১৬ হাজার ডলার বকেয়া। রিয়ের এস্টেট ব্যবসাতেও ২৮ হাজার ডলার লোকসান করেছে সে। দুবার বিয়ে করেছিল শামসুদ-দিন। ২০২২ সালে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার সন্তানের কাস্টডি নিয়ে আইনি লড়াইয়ের আবহে প্রবল মানসিক চাপে ছিল সে। আর্থিক ও পারিবারিক সমস্যার জেরে একাকিত্বে ভুগতে থাকে। সেখান থেকেই শামসুদ-দিন কট্টরপন্থার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল বলে ধারণা এফবিআইয়ের।
ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার ইভ উপলক্ষে বহু মানুষের জমায়াতের সুযোগ নিয়েই মূলত এই ধরণের হামলা চালায় আইসিস জঙ্গিগোষ্ঠী। গত কয়েক দশকে এমন ঘটনা বহুবার ঘটেছে।
২০২৩ সাল, ১ জানুয়ারি
কাবুল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের বাইরে বিস্ফোরণ। কাবুলে তালিবান সেনার উপর হামলা চালানো হয়েছিল। ঘটনায় ২০জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। জখম হয়েছিলেন ৩০জন। বিস্ফোরণের ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল আইসিস।
২০২২, ২৬ ডিসেম্বর
আইসিস ক্যাপিটাল হিসেবে পরিচিত রাক্কায় সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের সিকিউরিটি সেন্টারে হামলা চালিয়েছিল এক আত্মঘাতী বোমারু। অন্তত ৬জনের মৃত্যু হয়েছিল। পরে ঘটনার দায় স্বীকার করে আইসিস।
২০২০, ৩০ ডিসেম্বর
ইসলামিক স্টেটস জঙ্গিদের হামলায় ৩৭জন নিহত হয়েছিলেন। ইরাকের বর্ডার এলাকার কাছে একটি মরুভূমিতে একটি বাসে হামলা চালিয়েছিল। ঘটনায় ৩৭জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন ১৩জন।
২০১৯, ২৭ ডিসেম্বর
নাইজেরিয়ায় ইসলামিক জঙ্গিদের হামলায় মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ১১জনের। হামলার দায় স্বীকার করে ৫৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল আইএসের নিউজ এজেন্সি আমাক।
২০১৮, ৩১ ডিসেম্বর
রাশিয়ার একটি বিল্ডিংয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন তলায় মৃত্যু হয়েছিল বাসিন্দাদের। বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। অন্তত ৪২জনের মৃত্যু হয়েছিল। আক্রান্ত হয়েছিলেন ১২জনের বেশি। ইসলামিক স্টেটের একটি খবরের কাগজে ওই হত্যালীলার দায় স্বীকার করেছিল আইএস।
২০১৭, ২৮ ডিসেম্বর
আফগানিস্তানের কাবুলে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল এক আত্মঘাতী বোমারু। ঘটনায় ৫০জনের মৃত্যু হয়েছিল। ৮০-র বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। ঘটনায় দায় স্বীকার করেছিল আইএস।
২০১৭, ১ জানুয়ারি
ইস্তানবুলের নাইট ক্লাবে গুলিবর্ষণকাণ্ডে অন্তত ৩৯জনের মৃত্যু হয়। অন্তত ৭০জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল আইএস
২০১৭, ২ জানুয়ারি
ইরাকে আত্মঘাতী বোমারুর হামলায় মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ৭০জনের। তিনটি পৃথক বোমা হামলা ঘটানো হয়েছিল। শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিলেন। ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল আইএস।