মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধি: হাই প্রোফাইল বলিউড অভিনেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন উঠেছে। ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে শাহরুখ খান ও সলমন খানকে। সেই তালিকায় কখনই ছিলেন না সইফ আলি খান। অথচ সেই সইফকেই পড়তে হল হামলার মুখে।
কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে কীভাবে পৌঁছল দুষ্কৃতীরা ? ১ কোটি টাকা না পেয়েই কি হামলা ?
বুধবার রাত আড়াইটে নাগাদ সইফ আলি খানের বাড়ির পিছনের আপৎকালীন সিঁড়ি দিয়ে বাড়িতে ঢোকে এক দুষ্কৃতী। সইফপুত্র জে-র দেখভালের দায়িত্বে থাকা পরিচারিকা জানান, অভিনেতার ছোট ছেলের ঘরের বাথরুমের সামনে একজনের ছায়া দেখেন তিনি। তাঁর মনে হয়েছিল হয়ত করিনা ছেলেকে দেখতে আসছেন। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলেও ঘরে কাউকে ঢুকতে না দেখে সন্দেহ হয় তাঁর। ঘর থেকে বেরিয়ে বাথরুমের সামনে যান তিনি। সেই সময় ওই দুষ্কৃতী ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চিৎকার করেন পরিচারিকা। অভিযোগ, ধারাল অস্ত্র দেখিয়ে তাঁকে চুপ করায় দুষ্কৃতী। দুষ্কৃতীর দাবি মেনে টাকা দিতে অস্বীকার করেন পরিচারিকা। দুপক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাদানুবাদের শব্দে ঘুম ভাঙে সইফের। ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পর দুষ্কৃতী হামলা চালায় ছোটে নবাবের উপর। হামলা চালানোর আগে সে নাকি সইফকে বলেছিল ১ কোটি ছাড়ো। টাকা না পেয়ে ৬ বার ধারাল অস্ত্র দিয়ে অভিনেতাকে আঘাত করে দুষ্কৃতী। সইফ শুটিং থেকে ফিরে গাড়িচালককে ছুটি দিয়েছিলেন। গাড়ি না থাকায়, বাধ্য হয়ে তাঁকে অটোয় করে হাসপাতালে নিয়ে যান ছেলে ইব্রাহিম। মুম্বইয়ের লীলাবতি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর বিপন্মুক্ত সইফ। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরনোর পর দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল বান্দ্রা থানার পুলিশ।
সইফের বাংলোর ৩৫টি সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে দেখার পর আততায়ীকে চিহ্নিত করে পুলিশ। তারপর মোবাইল নেটওয়ার্কের শেষ লোকেশনের সূত্র ধরে চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে মুম্বই পুলিশের একটি টিম। এদিকে করিনা কাপুর খানের বয়ানও রেকর্ড করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, অভিনেতার উপর হামলা চালানোর পর বান্দ্রা স্টেশন থেকে প্রথম লোকাল ট্রেন ধরে নালাসোপারার দিকে পালাতে চেয়েছিল আততায়ী। সেখান থেকে মুম্বইয়ের বাইরে পালানোর ছক কষেছিল। এখানেই শেষ নয় সইফের উপর হামলার আগে নাকি শাহরুখের মন্নতেও রেইকি করেছে দুষ্কৃতীরা। ৬-৮ ফুটের একটি মই দিয়ে পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকার চেষ্টাও করে। তবে পাঁচিলের উপরে থাকা কাঁটাতারে আটকে যায় দুষ্কৃতীরা। পুলিশ সূত্রে খবর যে মইটি ব্যবহার করা হয়, সেটাও চুরি করা হয়েছিল। তা যথেষ্ট ভারী। মইটি একজনের পক্ষে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই মন্নতে রেইকির সময় অন্তত তিনজন ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। নয়ের দশকে হাম সাথ সাথ হ্যায়-র শুটিংয়ে গিয়ে কৃষ্ণসার হত্যার বদলা নিতে সলমনখানকে খুন করতে উঠে পড়ে লেগেছে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং। ওই সিনেমায় সলমনের সঙ্গে ছিলেন সইফ আলি খানও। এই হামলা কি স্রেফ ডাকাতির চেষ্টা নাকি এর পিছনে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের হাত আছে? তা খতিয়ে দেখছে মুম্বই পুলিশ।
মুম্বইয়ের বান্দ্রা অঞ্চলে একসে বাড়কার এক তারকার বসবাস। সলমন খান, শাহরুখ খান, সইফ আলি খানের পাশাপাশি একাধিক বলিউড তারকা থাকেন সেখানে। ২০২৪-এ এই বান্দ্রাতেই মুম্বইয়ের দাপুটে নেতা বাবা সিদ্দিকিকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল। এবার সইফ আলি খানকে কোপানোর ঘটনায় হাই প্রোফাইল তারকাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।