সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক- ১৯৮৪ সালের ২রা ও ৩রা ডিসেম্বরের সেই অভিশপ্ত রাত আজও ভুলতে পারেনি ভোপালবাসী। কীটনাশক তৈরির কারখানা ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেডের কারখানা থেকে অতি বিষাক্ত গ্যাস মিথাইল আইসোসায়ানেট লিক করে মৃত্যু হয়েছিল ৫৪৭৯ জনের। প্রায় ৪০ বছর পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে ওই এলাকা। অবশেষে মুক্তি পেল ভোপালের ওই এলাকা। ৪০ বছর ধরে ওই এলাকায় জমে ছিল ৩৩৭ টন কেমিক্যাল বর্জ্য। যা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল ভোপাল থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে ইন্দোরের কাছে পিথমপুর নামের একটি জায়গায়। পিথমপুরে ওই বর্জ্য খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট করে দেওয়া হবে।
ইতিমধ্যে সেই কাজ শুরু হয়েছে। তবে ভোপাল থেকে বিপুল পরিমাণ এই বর্জ্য সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না। ১২টি “লিক প্রুফ” এবং কোনওভাবেই আগুন ধরবে না এমন কন্টেনারে ভরে এই বর্জ্য নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতি কন্টেনারে প্রায় ৩০ টন বর্জ্য রয়েছে। বর্জ্য সরানোর কাজ করে মোট ১০০ জন শ্রমিক। শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য ৩০ মিনিট করে শিফটে কাজ করানো হয়। ৩০ মিনিটের বেশি কেমিক্যাল মিশ্রিত ওই বর্জ্যর কাছে থাকা অত্যন্ত বিপদজনক। এই বর্জ্য সরানো ও তা বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রায় ২০০ মিটার রেডিয়াস এলাকা বন্ধ করে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য। গোটা প্রক্রিয়ার সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য প্রায় ১ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ১২টি বর্জ্য ভর্তি কন্টেনার ২৫টি গাড়ির কনভয় নিয়ে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে পিথমপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সার্বিক সুরক্ষা, নিরাপত্তার দিক মাথায় রেখে এই টিমে ছিলেন ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, দমকল কর্মী, কুইক রেসপন্স টিমের সদস্যরা।
এই বর্জ্যের কিছু ভাগ পোড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বর্জ্য পোড়ানোর সময় নির্গত ধোঁয়া নিয়ে চিন্তিত স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের মধ্যে এই নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নিরাপভাবেই বর্জ্য পোড়ানো হবে বলে দাবি প্রশাসনের। স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্কিত না হওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। ১৯৮৪ সালে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনায় মৃত্যমিছিল ছাড়াও চিরকালের মতো পঙ্গু হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। নানান রকম রোগে ভুগে মৃত্যুও হয়েছিল হাজার হাজার মানুষের। এমনকী দুর্ঘটনার পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ওই এলাকার নবজাতক শিশুদের মধ্যেও দেখা গেছিল গ্যাস দুর্ঘটনার প্রভাব। পরে পরিত্যক্ত ওই কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য সরানো নিয়ে একাধিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। অবশেষে আদালতের হস্তক্ষেপে এতো বছর পর বর্জ্য সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল ভোপাল থেকে।