ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চে শুক্রবার মমতা পারিহার সহ ৪১৫ জন বঞ্চিত অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীর পক্ষের আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী জানান রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ না মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। কারন গত প্রায় ২৬ বছর ধরে রাজ্য সরকার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। অথচ তাদের দিয়ে সরকার সমস্ত কাজ করিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালে নির্দেশিকা জারি করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল সুপারভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট শূন্য পদের ৫০% শতাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং ৫০ শতাংশ বাইরে থেকে নিয়োগ করতে পারবে। কিন্তু রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারে এই নির্দেশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তারা বাইরে থেকেই ৭৫% শূন্য পদে নিয়োগ করছিল। উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ডিভিশন বে ঞ্চ সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কেই বহাল রাখলেন।
মামলার বয়ান অনুযায়ী আইসিডিস সুপারভাইজার পদে সর্বশেষ নিয়োগ হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৯ সালে । ৩৪৫৮টি আইসিডিস সুপারভাইজার শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বরে নির্দেশ নামায় পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে মোট শূন্যপদের ৫০% অঙ্গণওয়ারির কর্মী থেকেই পদোন্নতির ভিত্তিতেই নিয়োগ করতে হবে।
অভিযোগ রাজ্য সরকার অঙ্গণওয়ারির কর্মীদের জন্য শুধমাত্র ৪২২ টি শূন্যপদ রেখে বাকি ৩০৩৬ শূন্যপদে সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে। রাজ্য সরকারের এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে কিছু অঙ্গণওয়ারির কর্মী তারা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন।
বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ১৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৩সালে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ৫০% শূন্যপদে পদোন্নতির ভিত্তিতেই অঙ্গণওয়ারিরকর্মীদের থেকেই নিতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ অমান্য করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রেখে বলে অভিযোগ।
অঙ্গণওয়ারির কর্মীদের প্রমোশনাল সুপারভাইজার পদে নিয়োগের জন্য তারা পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এবং ১১৫২জনের একটি মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। তারা পরবর্তীতে ভাইভাতে বসতে পারবে। অভিযোগ তাদের প্যানেল প্রকাশ না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সরাসরি চালু রাখে।
আদালতে মামলা দায়ের হতেই ১৩ই জানুয়ারি ২০২৪ সালে বিচারপতি লোপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করে। মামলাটি শুনানি হলেও সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশের ওপর কোন স্থগিতাদেশ দেয়নি ডিভিশন বেঞ্চ।
নিয়োগ জট কাটাতে নতুন করে মৌমিতা ঘোষ দিপা মন্ডল সহ ৪১৫ জন মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার এজলাসে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মোতাবেক ৫০% অঙ্গণওয়ারির সুপারভাইজার শূন্যপদে অঙ্গণওয়ারির কর্মীদের মধ্যে থেকেই নিতে হবে। এবং হাই কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্বেও রাজ্য তা না মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু যা সম্পূর্ন বেআইনি। যাতে ৫০% শূন্যপদ কর্মী অঙ্গণওয়ারির মধ্য থেকেই নিয়োগ করা হয় তারই নির্দেশ দেওয়া বলে আদালত দাবী করেন তিনি।
বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা নির্দেশ দেন যেহেতু বিচারপতি লোপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের ওপর কোন স্থগিতাদেশ নেই তাই রাজ্য সরকার ও পিএসসি ৫০% শূন্যপদে অঙ্গণওয়ারির কর্মীদের মধ্যে থেকেই নিতে হবে। পাশাপাশি রাজ্য সরকার ৩৪৫৮শূন্যপদের মধ্যে ১৭২৯ জনকে অঙ্গণওয়ারির কর্মীদের মধ্য থেকেই নিয়োগ করতে হবে। এবং গত ১২ই এপ্রিল যে ৪০৯ জন প্রমোশনাল পদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে তার নিয়োগ সরকার চালিয়ে যেতে পারবে। এবং বাকি শূন্যপদে ১১৫২ জনের মেধা তালিকা থেকেই নিয়োগ করতে পারবে। যেহেতু এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বিষয় ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন তাই রাজ্য সরকারক এবিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তাই তারা ডিভিশন বেঞ্চে যুক্ত হয়ে তাঁরা তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরেন। আজ ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় বহাল রাখল।