স্যালাইন বিতর্কে নড়েচড়ে বসলো নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য দফতরের থেকে রিপোর্ট তলব করলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। যে কোম্পানিকে ডিসেম্বর মাসে ব্ল্যাক লিস্টেড (নিষিদ্ধ) ঘোষণা করা হয়েছিলো, কিভাবে সেই কোম্পানির স্যালাইন সরকারি হাসপাতালে ব্যবহার করা হচ্ছিলো, সেই বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।
সঞ্জু সুর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ- শুক্রবার মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে মৃত্যু হয় এক প্রসূতির। পরিবারের অভিযোগ নষ্ট হয়ে যাওয়া স্যালাইন ব্যবহারের কারণেই মৃত্যু হয়েছে ওই প্রসূতির। প্রাথমিক তদন্তেও সেটাই উঠে আসে। এরপরই গতকাল স্বাস্থ্য সচিব নারায়ন স্বরূপ নিগম জানিয়েছিলেন বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য একটি বিশেষ দল মেদিনীপুর পাঠানো হচ্ছে। শনিবার সেই দল মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে গিয়েওছে। এদিকে জানা যায় ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস’ এর তৈরি এই ‘রিংগার ল্যাকটেড স্যালাইন’ গত ডিসেম্বর মাসেই নিষিদ্ধ ঘোষনা করে রাজ্য সরকারের স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরি। তারপরেও কিভাবে কালো তালিকাভুক্ত এই স্যালাইন সরকারি হাসপাতালে ব্যবহার করা হলো তাই নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রীও বিষয়টি নিয়ে নিজের উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে খবর। মূলতঃ তাঁর নির্দেশেই শনিবার মুখ্যসচিব এই বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট তলব করেছেন। দুই দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
উত্তরবঙ্গের চোপড়ার ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস’ এর স্যালাইন শুধু এরাজ্য নয়, অন্যান্য রাজ্যের হাসপাতালগুলোতেও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কয়েক মাস আগে কর্নাটকে এই একই কোম্পানির স্যালাইন ব্যবহার করার ফলে চার প্রসূতির মৃত্যু হয়। সেই সময় কর্নাটক সরকারের পক্ষ থেকে ওই রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের এই কোম্পানিকে ব্যান ঘোষণা করা হয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য দফতরকেও বিষয়টি জানানো হয়। এরপর ‘সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন’ এই কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করে এবং সব রাজ্যকে তা জানিয়েও দেয়। রাজ্য সরকারের ‘(স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ অর্গানাইজেশন)’ গত ডিসেম্বর মাসে ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস’ কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেই ঘোষণাই সার। রাজ্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে বহাল তবিয়তেই সরবরাহ করা হচ্ছিলো এই নিষিদ্ধ রিংগার ল্যাকটেড স্যালাইন। শুধু মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল নয়, শহর কলকাতার এসএসকেএম, এনআরএস, আরজিকর ও চিত্তরঞ্জন ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজে শনিবার দিনও এই একই কোম্পানির স্যালাইন রোগীদের দেওয়া হচ্ছিল বলে জানা যায়। এমনকি উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু সরকারি হাসপাতালেও নিষিদ্ধ এই স্যালাইনের বোতল পাওয়া যায়। যে কোম্পানিকে ডিসেম্বর মাসে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, কিভাবে সেই কোম্পানির স্যালাইন এখনো সরকারি হাসপাতালগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে, এই প্রশ্নই বিস্মিত নবান্নের শীর্ষ কর্তারা। উষ্মা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তার নির্দেশেই মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ শনিবার স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব নারায়ন স্বরূপ নিগমের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছেন। নবান্ন সূত্রে খবর, স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে, মেদিনীপুরের ওই প্রসূতির মৃত্যুর সঠিক কারণ কি ? কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেও কেন এবং কার নির্দেশে এই কোম্পানির স্যালাইন নেওয়া হচ্ছে ? রাজ্যের কোন কোন হাসপাতালে এই স্যালাইন পাঠানো হয়েছে ? স্বাস্থ্য দপ্তরের কোনো কর্তা এই স্যালাইন দেওয়ার বরাত দেওয়ার সঙ্গে জড়িত কিনা ? এখনো কত বোতল স্যালাইন বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছে, ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিত রিপোর্ট আগামী দুই দিনের মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষাক্ত স্যালাইন ব্যবহার করার ফলে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই বিরোধীরা রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রীর দিকে আঙ্গুল তুলতে শুরু করেছে। এদিকে স্বাস্থ্য দফতরের এই ঢিলেঢালা ভাব নিয়ে অস্বস্তিতে থাকা নবান্ন কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পথেই হাঁটতে চলেছে বলে সূত্রের খবর।