মাম্পি রায়, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কবে শুরু হচ্ছে মহাকুম্ভ মেলা ? কতদিন কুম্ভমেলা চলবে ?কুম্ভমেলা কোথায় কোথায় অনুষ্ঠিত হয় ?কুম্ভমেলা কেন, কীভাবে শুরু হয়েছিল ?এইসব প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর পেতে চোখ রাখুন এই প্রতিবেদনে।
২০২৫ সালে ১৩ জানুয়ারি প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলার সূচনা হচ্ছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে মেলা। পুণ্যস্নানের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোটি কোটি তীর্থযাত্রী পৌঁছে যান সেখানে। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম সমাবেশ এই কুম্ভমেলা। দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষজন আসেন এই কুম্ভমেলায়। প্রয়াগরাজে ভক্তরা গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতীর পবিত্র সঙ্গমে স্নান করেন। কথিত আছে ওই সঙ্গমে স্নান করলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পাশাপাশি মনের শান্তি এবং মোক্ষলাভ হয়। কুম্ভমেলা প্রতি তিন বছরে অনুষ্ঠিত হয় আর মহা কুম্ভের শুভ অনুষ্ঠান ১৪৪ বছরে একবারই হয়। ২০২৫ সালে এই শুভ সংযোগ ঘটছে। তাই ২০২৫-এর কুম্ভমেলার মাহাত্ম্যই আলাদা।
প্রতি ১২ বছর অন্তর মহাকুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১২ বছর অন্তর কেন?
কথিত আছে, কুম্ভমেলা সমুদ্র মন্থনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। দেবতা এবং অসুরদের সমুদ্র মন্থনের ফলেই অমৃত কলসের প্রাপ্তি হয়েছিল। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, দূর্বাসা মুনি পারিজাত ফুলের মালা দিয়েছিলেন দেবরাজ ইন্দ্রকে। কিন্তু দেবরাজ ইন্দ্র সেই মালা ঐরাবতের দিকে ছুঁড়ে দেন। ঐরাবতও সেই মালা মারিয়ে চলে যায়। তাতে অপমানিত হয়ে দেবরাজ ইন্দ্রকে অভিশাপ দিয়েছিলেন দুর্বাসা ঋষি । তিনি বলেন, ইন্দ্র তাঁর ক্ষমতা, তাঁর রাজ্য এবং দেবতাদের গৌরব হারাবেন। স্বর্গ লক্ষ্মীহীন হয়ে পড়বে। তার ফলে দূর্বল হয়ে পড়েন দেবতারা।
অন্যদিকে শক্তি বাড়তে থাকে অসুরদের। মা লক্ষ্মীর স্থান হয় সমুদ্রগর্ভে। ক্রমেই জৌলুস হারাতে থাকে স্বর্গ। দেবতাদের শক্তিক্ষয়ের সুযোগ নিয়ে স্বর্গে হামলা চালায় অসুররা। তারপর সমস্ত দেবতা প্রজাপতি ব্রহ্মার দ্বারস্থ হন। পুরো সমস্যার কথা শুনে সমুদ্র মন্থনের পরামর্শ দেন ব্রহ্মা। তিনি জানান, সমুদ্র মন্থনের ফলে অমৃতকলসের প্রাপ্তি হবে। সেই অমৃত পান করলেই অমর হয়ে যাবেন দেবতারা। মৃত্যুও তাঁদেরকে ছুঁতে পারবে না। সমুদ্র মন্থনের সময় একদিকে যেমন ছিলেন দেবতারা অন্যদিকে ছিলেন অসুরকূল। অমর হওয়ার আশায় অসুররা যোগ দেন অমৃত মন্থনে। অমৃতের কলস উঠে আসতেই দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সংঘর্ষের মধ্যেই নিজের বাহন গরুড়দেবকে অমৃতকলস নিয়ে উড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন ভগবান বিষ্ণু। অমৃত কলস নিয়ে যাওয়ার সময় ৪ফোঁটা অমৃত ৪টি জায়গায় পড়ে। হরিদ্বার, উজ্জয়িনী, নাসিক এবং প্রয়াগরাজ। তারপর থেকেই এই ৪টি জায়গা মহাতীর্থ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর থেকে এই দিব্যস্থানে কুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়। দেবতা ও অসুরদের মধ্যে অমৃত প্রাপ্তির এই যুদ্ধ চলেছিল ১২দিন। দেবতাদের এই ১২দিন মানুষের ১২বছরের সমান। তাই ১২ বছর অন্তর এই মহাকুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক কোথায় অনুষ্ঠিত হয় কুম্ভমেলা।
কুম্ভমেলা ৪টি পবিত্র স্থানে হয়-
১. প্রয়াগরাজ- প্রয়াগরাজ ত্রিবেণী সঙ্গম হিসেবে পরিচিত। গঙ্গা যমুনা ও সরস্বতী নদী মিলিত হয়েছে এই জায়গায়।
২. হরিদ্বার – এখানে একেবারে পাহাড় থেকে নীচে নেমে এসেছে গঙ্গানদী। মন ও আত্মার শান্তির জন্য গঙ্গাস্নান করেন পুণ্যার্থীরা
৩. নাসিক- গোদাবরী নদীর তীরে অবস্থিত
৪. উজ্জয়িনী- শিপ্রা নদীর তীরে অবস্থিত
কিন্তু কখন কোথায় কুম্ভমেলা হয় ?
গ্রহরাজ বৃহস্পতির সূর্যের চারিদিকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে ১২ বছর। ওই ১২বছরের হিসেবেই কুম্ভমেলার স্থান নির্ধারণ করা হয়।
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, ১২ বছরে বৃহস্পতি যখন একটি রাশিতে প্রবেশ করে, তখন কুম্ভমেলা হয়। বৃহস্পতি গ্রহ যখন বৃষ রাশিতে থাকে এবং সূর্য দেবতা মকর রাশিতে আসেন, তখন প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়। যখন বৃহস্পতি কুম্ভ রাশিতে এবং সূর্য দেবতা মেষ রাশিতে থাকেন, তখন হরিদ্বারে কুম্ভের আয়োজন করা হয়। সূর্য এবং বৃহস্পতি উভয় গ্রহই যখন সিংহ রাশিতে থাকে, তখন নাসিকে মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়।